৬ বছরের শিশুকে খুন: মুসলিম বিদ্বেষের জেরে বুক কাঁপানো ঘটনার রায়!

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৬ বছর বয়সী এক শিশুকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এক মার্কিন বাড়িওয়ালার সাজা ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।

ঘটনাটি ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে, যেখানে ২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন পরেই মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব থেকে শিশুটিকে হত্যা করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জোসেফ কজুব নামের ৭৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ঘৃণামূলক অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

নিহত শিশু ওয়াদিয়া আলফায়ুমি ছিল ফিলিস্তিনি-আমেরিকান। হামলার সময় ওয়াদিয়ার মা হানান শাহীনও গুরুতরভাবে আহত হন।

পরিবারটি প্লেনফিল্ডে কজুবের বাড়িতে ভাড়া থাকত, যা শিকাগো থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত।

মামলার শুনানিতে বাদীর মা’য়ের মর্মান্তিক সাক্ষ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি জানান, কজুব প্রথমে তাকে আক্রমণ করে এবং পরে তার ছেলেকে হত্যা করে।

কজুব তাদের মুসলিম হওয়ার কারণে বাড়ি ছাড়তে বলেছিল। এছাড়াও, ৯১১-এ ফোন করার একটি অডিও এবং পুলিশের ফুটেজও আদালতে পেশ করা হয়।

কজুবের স্ত্রী মেরী, যিনি বর্তমানে তাকে তালাক দিয়েছেন, তিনিও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

তিনি জানান, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর কজুবের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়।

পুলিশের ভাষ্যমতে, কজুব একটি ছুরি বের করে শিশুটিকে ২৬ বার আঘাত করে এবং ছুরিটি তার শরীরেই গেঁথে রেখেছিল।

আদালতের বিচারক কিছু রক্তাক্ত দৃশ্যের ছবি জনসাধারণের সামনে প্রদর্শন না করার নির্দেশ দেন, যেখানে ওয়াদিয়ার পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি মাইকেল ফিটজগেরাল্ড বিচারকদের বলেন, “এই আসামীর ছোট্ট ছেলেটিকে হত্যা করাই যথেষ্ট ছিল না, সে তার শরীরে ছুরিটি গেঁথে রেখেছিল।

রায় ঘোষণার জন্য জুরি বোর্ডের সদস্যরা ৯০ মিনিট ধরে আলোচনা করেন।

উইল কাউন্টি স্টেট অ্যাটর্নি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কজুবের ২০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

আদালতের শুনানির আগে সরকারি কৌঁসুলিরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং তারা ঠিক কী ধরনের শাস্তি চাইছেন, সে বিষয়েও কিছু জানাননি।

ইলিনয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই।

এই হত্যাকাণ্ডের পর মুসলিম-বিদ্বেষের ভয় আবারও বেড়ে যায়।

বিশেষ করে প্লেনফিল্ড এবং আশপাশের শহরতলিতে বসবাসকারী একটি বড় ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।

ওয়াদিয়ার জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়েছিল এবং প্লেনফিল্ডের কর্মকর্তারা তার স্মরণে একটি পার্ক তৈরি করেছেন।

শুনানির সময় কজুব কোনো কথা বলেননি।

তার আইনজীবীরা মামলার দুর্বলতা তুলে ধরেন।

তবে তার আইনজীবী জর্জ লেনার্ড এখনো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি এবং সাজা ঘোষণার আগে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আহত হানান শাহীনের শরীরে ডজনেরও বেশি ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল এবং সুস্থ হতে তার কয়েক সপ্তাহ লেগেছিল।

তিনি জানান, কজুবের বাড়িতে ভাড়া থাকার প্রথম দুই বছরে তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি, এমনকি তারা রান্নাঘর ও বসার ঘরও একসঙ্গে ব্যবহার করতেন।

কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর কজুব তাকে জানান, মুসলিমদের সেখানে থাকার অনুমতি নেই, তাই তাদের চলে যেতে হবে।

পরে কজুব শাহীনকে আক্রমণ করে, তাকে মাটিতে ফেলে দেয়, ছুরিকাঘাত করে এবং দাঁত ভাঙার চেষ্টা করে।

হানা শাহীন আদালতে ইংরেজি ও আরবিতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছিলেন, “সে আমাকে বলেছিল, ‘একজন মুসলিম হিসেবে তোমার মরা উচিত’।”

পুলিশের ভাষ্যমতে, ঘটনার পর কজুবকে বাড়ির বাইরে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়, তার শরীরে ও হাতে রক্ত লেগে ছিল।

এদিকে, শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াদিয়ার বাবা ওদাই আলফায়ুমির মামলা।

ওদাই শাহীনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন এবং তারা একসঙ্গে থাকতেন না।

মার্কিন বিচার বিভাগও একটি ফেডারেল ঘৃণা অপরাধের তদন্ত শুরু করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *