বিদেশি বাবার এই সিদ্ধান্তে চোখে জল, কেন এমন করলেন?

মিশিগানের বাসিন্দা কেনিয়ার নাগরিক স্যাম কাঙ্গেথে, অভিবাসন জটিলতার কারণে নিজের দেশ কেনিয়ায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা সত্ত্বেও, নির্বাসন এড়াতে তিনি স্বেচ্ছায় এই পদক্ষেপ নেন। সম্প্রতি, পরিবারের মায়া ত্যাগ করে নিজের জন্মভূমি কেনিয়ায় ফিরে আসার কঠিন সিদ্ধান্তটি বিশেষভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রায় ১৬ বছর আগে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কাঙ্গেথে কেনিয়া ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। মিশিগানে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে তিনি বিয়ে করেন এবং পরিবার ও কর্মজীবন ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়েছিলেন।

কিন্তু অভিবাসন সংক্রান্ত কিছু জটিলতা তার জীবনে এক গভীর সংকট তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তিনি নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়েন। এর ফলে, নিজের সম্মান বজায় রাখতে এবং পরিবারের সঙ্গে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্দেশ্যে তিনি স্বেচ্ছায় কেনিয়ায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কাঙ্গেথের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে তার স্ত্রী লাতাভিয়া এবং তিন সন্তান- এলা, ডোয়াইট ও হেইলির জীবনে নেমে আসে এক গভীর শোকের ছায়া। বিদায়ের দিন, সবার চোখে জল, আর্তি নিয়ে প্রিয় মানুষটির অপেক্ষায় দিন গোনার পালা। তাদের সবার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বিদায়ের মুহূর্ত।

ছোট মেয়ে এলা বাবার কাছে ফিরে আসার বায়না ধরেছিল, কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। প্রিয়জনের এই বিচ্ছেদ তাদের জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

কাঙ্গেথে জানান, তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যা তার পরিবারকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। তাই তিনি পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়া, পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো, এবং রাতে সন্তানদের মুখচ্ছবি ভালোভাবে দেখার মতো কাজগুলো তিনি নিয়মিত করতেন।

আগস্ট মাসের ১৭ তারিখে তিনি যখন কেনিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন, তখন তার চোখে ছিল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন কাঙ্গেথে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে এই পেশায় যুক্ত হন। তিনি ল্যানসিং কমিউনিটি কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক এবং নর্থউড ইউনিভার্সিটি থেকে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ফিনান্সের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রিও লাভ করেন।

তার পুরনো কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ড্যান হেনরি জানিয়েছেন, কাঙ্গেথে একজন ভালো মানুষ এবং সমাজের জন্য উৎপাদনশীল একজন সদস্য।

কাঙ্গেথের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সময়কালে, ২০১৬ সালে তার প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়। পরে তিনি লাতাভিয়াকে বিয়ে করেন, যিনি ইতিমধ্যে দুটি সন্তানের মা ছিলেন। বিয়ের পর তিনি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন, তবে আগের একটি ঘটনার কারণে তার আবেদনটি প্রত্যাখ্যাত হয়।

বর্তমানে তিনি কেনিয়ায় ফিরে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে, কাঙ্গেথে কেনিয়ার নাইরোবিতে তার বোনের বাড়িতে থাকছেন এবং সেখানে একটি ভালো চাকরির সন্ধান করছেন। তিনি এখনও তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, বিশেষ করে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারের সবাই, বিশেষ করে তার স্ত্রী এবং সন্তানেরা, এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে চেষ্টা করছেন। তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে সংগ্রাম করছেন।

কাঙ্গেথে চান, তার এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অভিবাসন বিষয়ক জটিলতায় পড়া অন্যদের সাহায্য করা হোক এবং তাদের পরিবারের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ তৈরি করা সম্ভব হোক। তিনি বিশ্বাস করেন, একজন অতিথি হিসেবে তিনি সবসময় তার দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলেছেন এবং ভালো একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

তাই তিনি নিজের সম্মান ও পরিবারের মঙ্গলের কথা ভেবেই এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার জন্য আদালতের শুনানির অপেক্ষায় আছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *