লজ্জা থেকে ভালোবাসায়: অভিবাসী মায়ের খাবার নিয়ে সন্তানের নতুন পাঠ!

শিরোনাম: অভিবাসন ও আত্ম-অনুসন্ধান: সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলার গল্প

ছোটবেলায়, স্কুলের টিফিনের কৌটোটা যেন এক বিভীষিকা ছিল। আমার মায়ের হাতের তৈরি খাবার—হয়তো আলুর চপ, অথবা কোনো অচেনা সবজি—বন্ধুদের সামনে খুলতে লজ্জা হতো।

মনে হতো, যেন আমি তাদের থেকে আলাদা, ভিন্ন এক জগতের মানুষ। তাদের হাসাহাসি, তাদের কৌতূহল—সবকিছুই আমাকে আরও সংকুচিত করে দিত। আমি তখন বুঝতাম না, আমার এই দ্বিধা, এই সংকোচ, আসলে কত গভীর শিকড় গেড়ে বসে আছে।

তবে, সময় বদলায়, আর তার সাথে বদলায় অনেক কিছু। এই পরিবর্তনের গল্প শুনিয়েছেন ডারিয়া লাভেল।

তিনি একজন ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান, যিনি অভিবাসী পরিবারের সংস্কৃতি আর স্কুলের বন্ধুদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে গিয়ে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছিলেন। লাভেলের শৈশব ছিল তার পরিবারের ঐতিহ্যবাহী খাবার-দাবারের প্রতি এক ধরনের লুকোচুরির খেলা।

তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আর খাদ্যাভ্যাস অন্যদের কাছে ছিল যেন এক বিদ্রূপের বিষয়।

ডারিয়ার ভাষায়, “ছোটবেলায়, আমার আমেরিকান বন্ধুদের সামনে আমি আমার মায়ের হাতের খাবার—যেমন পেলমেনি (এক ধরনের ইউক্রেনীয় ডাম্পলিং), বা বোরশট (একটি সবজি ও মাংসের স্যুপ)—খেতে পারতাম না। কারণ আমি তাদের থেকে আলাদা হতে চাইতাম না।”

এই না চাওয়াটা ছিল আসলে এক ধরনের ভয়ের ফল। ভয়ে মিশে ছিল লজ্জা, আর সেই লজ্জার কারণ ছিল, সম্ভবত, অন্য সবার মতো হতে না পারার কষ্ট।

কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে, ডারিয়ার মনে হয়, সবকিছু যেন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। বিশেষ করে যখন তিনি নিউইয়র্ক শহরে পা রাখেন, যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের অবাধ আনাগোনা ছিল।

সেখানে তিনি উপলব্ধি করেন, ভিন্নতা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি গর্ব করার মতো একটা বিষয়। তিনি যখন তার প্রেমিককে (যিনি পরবর্তীতে তার স্বামী হন) নিয়ে একটি ইউক্রেনীয় রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তার সংস্কৃতিকে আরও গভীরভাবে অনুভব করেন।

ডারিয়া এখন তার সন্তানদের মধ্যে এই সংস্কৃতি আর ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে চান।

তিনি চান, তার ছেলেমেয়েরা যেন তাদের সংস্কৃতির প্রতি গর্বিত হয়, এবং অন্যদের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে শেখে।

ডারিয়ার মতে, “আমরা যদি আমাদের সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের খাবার চেখে দেখতে উৎসাহিত করি, তবে তারা অন্যদের সংস্কৃতি সম্পর্কেও আগ্রহী হবে।”

আজকাল, ডারিয়ার সন্তানেরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খায়—ইউক্রেনীয়, ইতালীয়, জার্মান, এমনকি জাপানি ও ভারতীয় খাবারও।

ডারিয়া তাদের শেখান, কোনো খাবার অপছন্দ হলেও, অন্যদের খাবারকে ঘৃণা করতে নেই। বরং, নতুন কিছু চেষ্টা করার আগ্রহ রাখতে হয়।

ডারিয়ার এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেককে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

অভিবাসন, সংস্কৃতি, এবং আত্ম-পরিচয়—এগুলো একটি জটিল প্রক্রিয়া।

আমাদের সন্তানদের মধ্যে এই বোধ তৈরি করতে হবে যে, ভিন্নতা দুর্বলতা নয়, বরং এটি আমাদের জীবনের সৌন্দর্য।

ডারিয়ার গল্প আমাদের দেখায়, কীভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের মধ্যে এই শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে পারি, যা তাদের শুধু ভালো মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলবে না, বরং তাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *