১.২ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিক: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কি তবে বেকারত্ব বাড়ছে?

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী শ্রমিক কমে যাওয়ায় শ্রমবাজারে সংকট। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় দেশটির শ্রমবাজারে দেখা দিয়েছে সংকট।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক দেশটির শ্রমশক্তি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন।

পিয়ু রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ২০ শতাংশ অভিবাসী। এদের মধ্যে কৃষি, মৎস্য ও বনজ সম্পদ খাতে কর্মরত শ্রমিকের ৪৫ শতাংশই অভিবাসী।

এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকদের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং সেবাখাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় ২৪ শতাংশ অভিবাসী।

ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল ভ্যালির বাসিন্দা লিদিয়া (প্রকৃত নাম গোপন রাখা হয়েছে) জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে টমেটো ক্ষেতে কাজ করছেন।

তবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। তিনি বলেন, “ভয় হয়, গাড়ি চালালে পুলিশ কাগজপত্র দেখতে চাইবে। আমাদের কাজ করতে হয়, পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করতে হয় এবং বাড়ি ভাড়া দিতে হয়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ। এর ফলে বিভিন্ন শিল্পে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট।

ডালাস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অভিবাসীরা ৫০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।

টেক্সাসের ম্যাকঅ্যালেন শহরের কাছে ভুট্টা ও তুলার ক্ষেতগুলোতে এখন ফসল তোলার সময়। সেখানকার শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলিজাবেথ রড্রিগেজ।

তিনি জানান অভিবাসন নীতির কারণে অনেক শ্রমিক কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন, ফলে ফসল তোলার মতো পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

ফার্মওয়ার্কার অ্যাডভোকেসি পরিচালক রড্রিগেজ আরও বলেন, “খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণ সাইটগুলোতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের কারণে কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।” ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পারিবারিক খামারের মালিক লিসা টেট জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে তাদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্থানে নির্মাণ শ্রমিকদের সংখ্যা কমে গেছে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড-স্যান বার্নার্দিনো-অন্টারিও এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-লং বিচ-গ্লেনডেল এলাকায় নির্মাণ খাতে কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

পিয়ু রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষক স্টেফানি ক্রেমার সতর্ক করে বলেছেন, অভিবাসী শ্রমিক কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যখাতেও প্রভাব পড়তে পারে।

কারণ, হোম হেলথ কেয়ার কর্মীদের প্রায় ৪৩ শতাংশই অভিবাসী।

এদিকে, সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন (এসইআইইউ)-এর ক্যালিফোর্নিয়ার স্থানীয় প্রেসিডেন্ট আর্নুলফো দে লা ক্রুজ বলেন, “যদি অভিবাসী শ্রমিকরা ক্ষেতে কাজ না করে, তবে আমাদের ফসল ফলাবে কে? হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে কর্মী পাওয়া যাবে না।

তখন কী হবে?”

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *