আদালতের করিডোরে অভিবাসী আটকের প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ল স্বেচ্ছাসেবক দল!

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আদালতে অভিবাসীদের আটকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা। সিয়াটল (Seattle) এবং অন্যান্য শহরে, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আদালতে অভিবাসীদের আটকের ঘটনার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে।

এই স্বেচ্ছাসেবকরা মূলত অভিবাসন বিষয়ক আদালতের বাইরে অবস্থান করা অভিবাসীদের সাহায্য করছেন, যারা বিতাড়নের ঝুঁকিতে রয়েছেন। খবর অনুযায়ী, এই স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ, যেমন- শিক্ষক, আইনজীবী, এবং সাধারণ নাগরিক। তারা অভিবাসীদের মানসিক এবং লজিস্টিক্যাল সহায়তা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক আইন বেশ জটিল। অনেক অভিবাসী, যারা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

তারা আটকদের ফোন নম্বর মুখস্থ করতে এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সহায়তা করছেন। এছাড়াও, আটকের সময় তাদের জিনিসপত্র দেখাশোনা করার ব্যবস্থাও করছেন তারা।

এই ধরনের আটকের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইও চলছে। অনেক মানবাধিকার সংগঠন এবং আইনজীবী অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করছেন। তারা আদালতের বাইরে এই ধরনের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে class-action মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

স্বেচ্ছাসেবকদের এই প্রচেষ্টা বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই বিষয়ে, “নর্থওয়েস্ট ইমিগ্রান্ট রাইটস প্রজেক্ট”-এর কর্মী স্টেফানি গাই জানান, স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব হতো না। অনেক স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিতভাবে কাজ করার জন্য তাদের অফিসের ছুটি পর্যন্ত নিচ্ছেন।

আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক, রব্বি রোর, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অলাভজনক সংস্থার পরিচালক, তিনি জানান, “এখানে উপস্থিত থাকার মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারে যে তাদের কথা শোনা হচ্ছে এবং তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং বিভ্রান্তিকর। আমরা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করি।”

আটকের ঘটনাগুলো প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, যা মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তবে, ঠিক কতজন অভিবাসীকে এভাবে আটক করা হয়েছে, সেই সংখ্যা এখনো স্পষ্ট নয়। ইমিগ্রেশন বিষয়ক আদালত এই বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

নিউইয়র্ক শহরে, এক নারী তার স্বামীর জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কারণ তিনি আদালত থেকে বের হওয়ার পরেই নিখোঁজ হন। পরে জানা যায়, অভিবাসন পুলিশ তাকে আটক করেছে। এই ঘটনা অভিবাসন বিষয়ক কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

টেক্সাসের এল পাসো-তে, কলেজ ছাত্রী ব্রায়ানা গার্সিয়া নিয়মিতভাবে আদালতের শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি অভিবাসীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে অবহিত করেন এবং আটকের সময় অভিবাসন কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের ভিডিও ধারণ করেন। ডেনভারেও (Denver) অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা অভিবাসীদের আদালত থেকে তাদের গাড়িতে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন, যাতে তারা আইনজীবী এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অবশ্য বলছে, তারা অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে। তবে, স্বেচ্ছাসেবকদের এই কাজ অভিবাসীদের প্রতি সংহতি এবং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *