আজকাল মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, তাই না? চারপাশে এত কিছু – স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া, আর অবিরাম আসা নোটিফিকেশন – যেন আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়।
পরীক্ষায় ভালো ফল করা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, এমনকি প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো – সবক্ষেত্রেই মনোযোগের অভাব একটা বড় সমস্যা।
আধুনিক জীবনযাত্রায় মনোযোগের গুরুত্ব এবং কীভাবে এটি বাড়ানো যায়, সে সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক।
সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, গড়পড়তা একজন মানুষের মনোযোগ এখন খুবই কম সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। আগে যেখানে আমরা একটি স্ক্রিনে প্রায় আড়াই মিনিট মনোযোগ দিতে পারতাম, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৪৭ সেকেন্ডে!
প্রযুক্তি, বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহারের বাড়বাড়ন্ত এর প্রধান কারণ। আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত তথ্যের পরিবর্তন চায়, আর সে কারণে ঘন ঘন নোটিফিকেশন ও সামাজিক মাধ্যমের আকর্ষণ থেকে দূরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মনোযোগ বাড়ানোর প্রথম উপায় হল, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনা। এটিকে একটি পেশীর মতো ভাবা যেতে পারে, যা নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়।
মনোবিদেরা বলেন, মনোযোগ বাড়ানোর জন্য কয়েকটি কার্যকরী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমত, ‘সক্রিয় বিরতি’ (Active Breaks)-এর ধারণাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটানা কাজ করার বদলে, মাঝে মাঝে ৩০ মিনিটের জন্য বিরতি নিন।
এই সময়ে অন্য কিছু করুন, যেমন হেঁটে আসা, পছন্দের কোনো গান শোনা অথবা পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটানো। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এমন কিছু করা যায় যা মন ও শরীরের জন্য আরামদায়ক।
মোবাইল ফোন বা সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন, কারণ এগুলো মনোযোগ আরও কমিয়ে দেয়।
দ্বিতীয়ত, ‘একাগ্রতা’ বা ‘একটি কাজ’-এর ওপর জোর দিন। মাল্টিটাস্কিং বা একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করার চেষ্টা করলে মনোযোগ দুর্বল হয়ে যায়।
বরং, একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি কাজ করুন এবং ধীরে ধীরে সেই সময়ের পরিমাণ বাড়ান। ‘পোমোডোরো টেকনিক’ এক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।
এই পদ্ধতিতে, ২৫-৩০ মিনিটের জন্য একটি কাজে মনোযোগ দিন, এরপরে ৫ মিনিটের বিরতি নিন।
তৃতীয়ত, পছন্দের কোনো কাজ বেছে নিন এবং তার প্রতি মনোযোগ দিন। শখের প্রতি মনোযোগ দিলে তা আমাদের মানসিক শান্তির পাশাপাশি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
একটি নতুন ভাষা শেখা, ছবি আঁকা অথবা বাগান করা – এমন কিছু বেছে নিন যা করতে ভালো লাগে।
বই পড়ার অভ্যাসও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়া অথবা কাজী নজরুল ইসলামের গান শোনাও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এছাড়াও, ধীরে ধীরে কঠিন বই যেমন হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস পড়ার চেষ্টা করতে পারেন।
সবশেষে, নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। সবসময় যে আপনি মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন, এমনটা নাও হতে পারে।
এমন দিন আসতেই পারে, যখন মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে নিজেকে চাপ না দিয়ে, ধীরে ধীরে চেষ্টা করুন।
মনে রাখতে হবে, মনোযোগ বাড়ানোর বিষয়টি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নিয়মিত চেষ্টা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা বাড়াতে পারি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও সফল হতে পারি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস