ইনসেল সংস্কৃতি: কিশোর মনে এর প্রভাব!

বর্তমান ডিজিটাল যুগে কিশোর-কিশোরীদের মনোজগতে ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি, নেটফ্লিক্স-এর ‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence) নামক একটি নতুন সিরিজে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এই সিরিজের লেখক জ্যাক থর্ন, যিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি বিশেষভাবে ইনসেল সংস্কৃতির (Incel Culture) প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণের কারণগুলো নিয়ে আলোকপাত করেছেন।

ইনসেল সংস্কৃতি মূলত একটি অনলাইন সম্প্রদায়, যেখানে “অনিচ্ছাকৃতভাবে অবিবাহিত” পুরুষরা একত্রিত হন। এই সংস্কৃতিতে নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ধারণা এবং পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটে।

জ্যাক থর্ন জানান, ‘অ্যাডোলেসেন্স’ লেখার সময় তিনি এই সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করেন এবং বুঝতে পারেন, কেন অল্পবয়সী ছেলেরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ইনসেলরা প্রায়ই একটি ধারণা পোষণ করে যে, নারীরা কেবল অল্প কিছু “আকর্ষণীয়” পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই ধারণা কিশোর মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

থর্ন মনে করেন, কিশোর বয়সে যদি তিনি একা থাকতেন, তাহলে হয়তো এই ইনসেল সংস্কৃতির তথাকথিত যুক্তিতে আকৃষ্ট হতেন। তিনি বলেন, এই সংস্কৃতিতে এমন কিছু বিষয় উপস্থাপন করা হয়, যা সহজেই তরুণদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সমাজে নারীদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়।

সিরিজের গল্পে, একটি সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে, কেন একজন তরুণ এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, সেই বিষয়টি অনুসন্ধান করা হয়েছে। থর্ন মনে করেন, এই ধরনের ঘটনার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন—পরিবারের উদাসীনতা, শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা, এবং কিশোরদের মানসিক বিকাশে ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব।

বর্তমানে, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর কন্টেন্ট দেখা সহজ হয়েছে। থর্ন মনে করেন, সরকার এবং অভিভাবকদের উচিত শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে আরও সচেতন হওয়া।

তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এই প্রসঙ্গে, তিনি অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং নরওয়ের উদাহরণ তুলে ধরেন, যেখানে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর ওপর শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর আইন রয়েছে। থর্ন মনে করেন, আমাদের দেশেও শিশুদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

‘অ্যাডোলেসেন্স’ সিরিজের মাধ্যমে লেখক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে চেয়েছেন: কীভাবে তরুণ প্রজন্মকে ইন্টারনেটের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায়?

তিনি মনে করেন, এই বিষয়ে সমাজের সকলের মধ্যে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। তিনি আশা করেন, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *