ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ: আলী খানকে ‘শত্রু’ প্রমাণে পুলিশ ও বিচার বিভাগের যোগসাজশ!

ভারতের একজন অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা সেঁটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি এমন কিছু কথা লিখেছেন যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। সম্প্রতি তাঁর দুটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

আলী খান মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সূত্রপাত হয়, হরিয়ানা রাজ্যের মহিলা কমিশনের প্রধান রেণু ভাটিয়ার মাধ্যমে। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে দুই নারী সেনা কর্মকর্তার প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ আনেন। যদিও তিনি তাঁর অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

এরপর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক সদস্য একই ফেসবুক পোস্টের সূত্রে অভিযোগ করেন যে, মাহমুদাবাদের লেখা তাঁকে এবং অন্যদের আহত করেছে। পুলিশ এই অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করে, যার মধ্যে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো, একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং নারীর শালীনতা লুন্ঠনের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।

দ্রুতই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার শুনানির আগে, দুই শতাধিক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা অভিযোগ করেন, মাহমুদাবাদ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মান ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছেন।

এই পরিস্থিতিতে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অধ্যাপক মাহমুদাবাদের বক্তব্যকে সহজে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। আদালত মনে করে, তাঁর কথার মধ্যে দ্বৈত অর্থ থাকতে পারে। এই বিষয়ে গভীরতা অনুসন্ধানের জন্য শীর্ষ আদালত তিনজন পুলিশ অফিসারের সমন্বয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে।

ইতিমধ্যে, অধ্যাপক মাহমুদাবাদের পরিবার এবং তাঁর বিভিন্ন সময়ের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। মিডিয়াতেও তাঁকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

বিজেপি’র ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করার দাবিতে বিক্ষোভের ঘোষণা করেছে। ক্ষমতাসীন বিজেপির মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-ও মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সোচ্চার হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি ভারতীয় সমাজে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের একটি চেষ্টা। অতীতেও, উমর খালিদ ও শারজিল ইমামের মতো বিদ্বানদের একইভাবে ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ঘটনাগুলোয় গণমাধ্যম, পুলিশ ও বিচার বিভাগের ভূমিকা বিশেষভাবে সমালোচিত হয়েছে। সকলের প্রত্যাশা, তদন্তকারী কর্মকর্তারা যেন কোনো প্রকার চাপ বা প্রোপাগান্ডার দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *