ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের অবনতির প্রায় দুই বছর পর, দেশ দুটি তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিয়েছে। মঙ্গলবার, উভয় দেশ তাদের রাজধানীতে হাইকমিশনার পুনরায় নিয়োগের ব্যাপারে রাজি হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার, ২০২১ সালের জুনে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি শহরতলিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে। এরপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। কানাডার এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে, ঘটনাটিকে “হাস্যকর” এবং “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” হিসেবে অভিহিত করে। এর ফলস্বরূপ, দেশ দুটি তাদের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে এবং ভিসা পরিষেবা স্থগিত করে।
ভারত তখন কানাডার বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসীদের” আশ্রয় দেওয়া এবং “ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ”কে উৎসাহিত করার অভিযোগ আনে, যা কানাডা সরকার প্রত্যাখ্যান করে।
সম্প্রতি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানান। যদিও ভারত জি-৭-এর সদস্য নয়, কার্নি জানান, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য টেবিলে পাওয়াটা জরুরি।
আলবার্টার পশ্চিমাঞ্চলে মোদি ও কার্নি মিলিত হন, যেখানে কার্নি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আতিথেয়তা করাকে “সম্মান” হিসেবে উল্লেখ করেন। মোদিও কার্নির প্রতি ইতিবাচক মন্তব্য করেন এবং দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতি “দৃঢ় বিশ্বাস” এর কথা উল্লেখ করেন।
তারা প্রযুক্তি, ডিজিটাল রূপান্তর, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে “সম্পর্ক আরও গভীর” করার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড বা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নিয়ে তারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, হারদীপ সিং নিজ্জার ছিলেন একজন প্রভাবশালী শিখ নেতা, যিনি ভারতের উত্তরাঞ্চলে ‘খালিস্থান’ নামে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। ভারত সরকার এই আন্দোলনকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং এর সঙ্গে জড়িত অনেক সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
কানাডায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের কিছু সদস্যের মধ্যে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন রয়েছে, বিশেষ করে যারা মুক্তভাবে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পান।
জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে, আলবার্টার ক্যালগারিতে শিখ বিক্ষোভকারীদের ‘খালিস্থান’ পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা মোদির সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নিজ্জারের হত্যার বিচার দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্নি নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চলমান বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে সতর্ক ছিলেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন