ভারতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘মাহুয়া’ মদের পুনর্জন্ম।
মধ্যপ্রদেশের সবুজ অরণ্যে বসন্তের আগমন ঘটেছে, আর তার সঙ্গেই যেন নতুন করে জীবন ফিরে আসার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে এক বিশেষ সুগন্ধ। গভীর অরণ্যের মাঝে বেড়ে ওঠা ‘মাহুয়া’ গাছের ফুল থেকে তৈরি হওয়া এক প্রকার ঐতিহ্যপূর্ণ মদের গল্প, যা বর্তমানে ভারতে আবার নতুন করে পরিচিতি লাভ করছে।
এই পানীয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের আদিবাসী সংস্কৃতি, যা এক সময় ব্রিটিশ শাসনের কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল।
মাহুয়া আসলে এক প্রকার গাছের ফুল, যা শুকিয়ে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক বিশেষ ধরনের মদ তৈরি করা হয়। ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে এটি শুধু একটি পানীয় নয়, বরং তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই পানীয় তৈরি ও ব্যবহার করে আসছে, যা তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই মদের রয়েছে নিজস্ব স্বাদ এবং গন্ধ, যা এটিকে অন্যান্য পানীয় থেকে আলাদা করে।
ব্রিটিশ শাসনামলে, উনিশ শতকের শেষের দিকে, মাহুয়াকে ‘ক্ষতিকর’ আখ্যা দিয়ে এর উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। এর কারণ হিসেবে তারা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাকে দায়ী করে।
এর ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে, কারণ তারা এই ফুলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কালের পরিক্রমায় মাহুয়া প্রায় ভুলতে বসেছিল মানুষ।
তবে, সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে এবং কিছু উদ্যোক্তার হাত ধরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। মাহুয়াকে ‘ঐতিহ্যপূর্ণ পানীয়’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা এর পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করেছে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা এখন আবার নতুন করে এই মদ তৈরি করছেন, যা তাদের অর্থনৈতিক জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বর্তমানে, ভারতের বিভিন্ন নামকরা রেস্টুরেন্ট ও বারে মাহুয়া থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ককটেল পরিবেশন করা হচ্ছে। মুম্বাইয়ের ‘মাস্ক’ এবং ‘বান্দ্রা বর্ন’-এর মতো জনপ্রিয় স্থানে মাহুয়া-মিশ্রিত খাবার ও পানীয় পাওয়া যাচ্ছে।
এমনকি, বিলাসবহুল হোটেল ও রিসর্টেও এই ঐতিহ্যবাহী পানীয় পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে, মাহুয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং এটি ভারতের সংস্কৃতিতে পুনরায় জায়গা করে নিচ্ছে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীরাও এখন মাহুয়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই পানীয় তৈরি করে তারা শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক মুক্তি আনছেন না, বরং তাদের সংস্কৃতিকেও টিকিয়ে রাখছেন।
তারা বলছেন, মাহুয়া তাদের কাছে এক ‘নির্ভরতার প্রতীক’।
ভারতে মাহুয়ার এই পুনর্জন্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি একদিকে যেমন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনছে, তেমনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নেও সাহায্য করছে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক