পাকিস্তানের মুরিদকে শহরে সম্প্রতি চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৭ই মে ভোরে চালানো এই হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা এই হামলা চালিয়েছে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে। তাদের ভাষ্যমতে, মুরিদকে শহরে অবস্থিত একটি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই হামলায় একটি সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে বেসামরিক নাগরিকেরাও হতাহত হয়েছেন।
মুরিদকে শহরটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যা লাহোর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই শহরে ‘জামিয়া দাওয়া ইসলামী’ নামে একটি মাদ্রাসা ও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই কমপ্লেক্সটি একসময় লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সঙ্গে যুক্ত ছিল। এলইটিকে ভারত সরকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করে থাকে।
হামলার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এতে ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। তবে ভারত সরকার তাদের এই দাবিকে সরাসরি অস্বীকার করেছে।
ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলায় কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন ও একটি মসজিদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মতে, হামলার কয়েকদিন আগে থেকেই তারা সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার আশঙ্কা করছিলেন। তাই কমপ্লেক্সের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
তবে যারা সেখানে ছিলেন, তাদের অনেকেই সরকারি কর্মচারী ছিলেন এবং হামলার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের অভিযান ছিল সুনির্দিষ্ট এবং এর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ধ্বংস করা। তারা জোর দিয়ে বলছেন, হামলায় শুধুমাত্র সন্ত্রাসী অবকাঠামোকেই নিশানা করা হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয় দেশ একাধিকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।
সম্প্রতি, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে গত ২২শে এপ্রিল এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপরই প্রতিশোধ হিসেবে মুরিদকে শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
এই ঘটনার পর উভয় দেশই তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। একদিকে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে, অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনার ওপর গভীর নজর রাখছে। কারণ, এটি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা