যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলে ভারতের জয়, বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা?
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার যুক্তরাষ্ট্রে, এবার সেই বাজারে চীনকে টপকে শীর্ষস্থান দখল করেছে ভারত। সম্প্রতি প্রকাশিত ক্যানালিস নামক গবেষণা সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) যুক্তরাষ্ট্রগামী স্মার্টফোন রপ্তানির ৪৪ শতাংশই ছিল ভারতে তৈরি। যেখানে গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, চীনের হিস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ছিল ৬১ শতাংশ।
এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। ক্যানালিসের বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা, অ্যাপলকে দ্রুত উৎপাদন ব্যবস্থা চীন থেকে সরিয়ে ভারতে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। অ্যাপল গত কয়েক বছরে ভারতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং তারা তাদের রপ্তানির একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যদিও অ্যাপল এখনও চীনের ওপর নির্ভরশীল, তবে ভারতের বাজারে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আইফোনের উৎপত্তিস্থল হবে ভারত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই উত্থান শুধু একটি দেশের সাফল্য নয়, বরং এটি বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক যখন জটিল হচ্ছে, তখন অনেক কোম্পানিই তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে চীনের বাইরে, বিশেষ করে ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো দেশগুলোতে প্রসারিত করতে চাইছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চীনের কঠোর বিধিনিষেধ এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে দেখা দেওয়া জটিলতাও এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারও তাদের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এনেছে, যার ফলে বিদেশি উৎপাদিত পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে চীনের উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েছে, যা ভারতকে সুবিধা এনে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্যেও রয়েছে সম্ভাবনা। পোশাক শিল্পের মতো, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশ নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে পারে। ভারতের এই সাফল্যের ধারা অনুসরণ করে, বাংলাদেশও বিশ্ব বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে পারে।
এক্ষেত্রে, সরকারের নীতি সহায়তা এবং উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
তবে, এই পরিবর্তনের ফলে চীনের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, তা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান আলোচনা সফল হলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।
তবে, সরবরাহ শৃঙ্খলে এই যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, তা সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী হবে।
তথ্য সূত্র: ক্যানালিস