ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা: যুদ্ধের ছায়া?

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: সংঘাতের এক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। উভয় দেশই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর অভিযোগ এনেছে।

এই উত্তেজনা মূলত কয়েক দশক ধরে চলা দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার গভীর ঐতিহাসিক বিরোধের ফল।

সংঘাতের সূত্রপাত:

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়।

দেশভাগের সময় ব্যাপক সহিংসতা ও উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়। কাশ্মীর ছিল উভয় দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত হয়।

কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধের কারণে ১৯৪৭ সালে প্রথম যুদ্ধ হয়। এরপর থেকে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

  • ১৯৪৭-এর দেশভাগ: ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজন ছিল অত্যন্ত কঠিন। এই বিভাজনে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।
  • কাশ্মীর সমস্যা: কাশ্মীর নিয়ে বিবাদ আজও বিদ্যমান। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।
  • যুদ্ধ ও চুক্তি: কাশ্মীর নিয়ে ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ১৯৬০ সালে সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা উভয় দেশের মধ্যে নদীর জল ব্যবহারের একটি চুক্তি ছিল। ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছিল।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ:

সম্প্রতি, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় বেসামরিক লোকজনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।

ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দিয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর অভিযোগ করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো:

  • ১৯৭১ সালের যুদ্ধ: ১৯৭১ সালে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতা লাভ করে। এই যুদ্ধে ভারতের সক্রিয় সমর্থন ছিল।
  • পারমাণবিক পরীক্ষা: ১৯৯৮ সালে উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
  • সন্ত্রাসী হামলা: মুম্বাই (২০০৮), উরি (২০১৬) এবং পুলওয়ামাতে (২০১৯) সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
  • বর্তমান পরিস্থিতি: সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ঘটনা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

উপসংহার:

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে অস্থির।

কাশ্মীর সমস্যা, সীমান্ত বিরোধ এবং সন্ত্রাসবাদ এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *