যুদ্ধবিধ্বস্ত কাশ্মীর: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ
গত কয়েক সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক আবারও চরম আকার ধারণ করেছে। কাশ্মীর সীমান্তে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায়, পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায়।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও ১০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
ভারত সরকার বরাবরই কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। ভারতের অভিযোগ, এসব গোষ্ঠী ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে, পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ইরানসহ বিভিন্ন দেশ উত্তেজনা কমাতে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও এই সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরোধী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শান্তি চায়।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত এড়াতে উভয় পক্ষকে সতর্ক করেছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম কাশ্মীর ইস্যুতে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ঐতিহাসিকভাবে, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে, ১৯৬০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তবে, ভারত বরাবরই কাশ্মীর সমস্যাকে দ্বিপাক্ষিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
ভারতের মতে, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তারা মনে করে, বাইরের কোনো শক্তি জড়ালে তা ‘ক্ষেত্রটিকে সমান করে দেবে’। অন্যদিকে, পাকিস্তান কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা চেয়েছে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আনুষ্ঠানিক মধ্যস্থতার পরিবর্তে, উভয় পক্ষের মধ্যে গোপন আলোচনা চালানো যেতে পারে।
তবে, এর জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা জরুরি।
এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা এবং সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা