ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আবারও উত্তেজনা, কাশ্মীর নিয়ে সংঘাতের আগুনে ঘি।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান বিরোধ আবারও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তীব্র এক সামরিক সংঘাতে উভয় পক্ষই নিজেদের জয় দাবি করছে।
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাতে কোনো বিজয়ী নেই।
গত মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের হত্যার ঘটনার জের ধরে এই উত্তেজনা শুরু হয়। এর পরেই দু’দেশের মধ্যে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে দ্রুত খবর প্রচারিত হয়, যেখানে পাকিস্তানকে আত্মসমর্পণের মতো কথা বলতে শোনা যায়। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক বিবৃতিতে জানান, সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত জবাব দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দেশটির সেনাবাহিনীকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, তাদের “বীরত্বপূর্ণ” ভূমিকার কারণে সামরিক ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বিমানবাহিনী ভারতের বন্দুকগুলোকে নীরব করে দিয়েছে, যা ইতিহাস সহজে ভুলবে না।”
রাজধানী ইসলামাবাদে তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।
তবে এই সংঘাত ছিল পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত।
আকাশপথে নিজেদের সাফল্যের দাবি করে পাকিস্তান জানায়, তারা ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানও ছিল।
অন্যদিকে, ভারত এখনও পর্যন্ত তাদের কোনো বিমান ধ্বংস হওয়ার কথা স্বীকার করেনি।
বরং তারা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি প্রকাশ করে দাবি করেছে, তাদের হামলায় পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি ও রাডার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশই নিজেদের সাফল্য জাহির করতে ব্যস্ত।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর, এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে দ্রুত যুদ্ধবিরতি হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উভয় দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করা হয়।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হলেও, ভারতের নেতারা এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা মানতে নারাজ।
তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে।
আসলে, ভারতের কর্মকর্তারা সম্ভবত জাতীয় আত্মমর্যাদার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চাইছে না।
এছাড়া, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর নিয়ে বিদেশি কোনো মধ্যস্থতাকে বরাবরই ভারত প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিবাদই সাম্প্রতিক সংঘাতের মূল কারণ।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়তো পরিস্থিতিকে সাময়িক শান্ত করতে পারে, কিন্তু কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান এতে পাওয়া যাবে না।
এই অঞ্চলের মূল সমস্যাগুলো যতদিন পর্যন্ত সমাধান না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই ধরনের উত্তেজনা চলতেই থাকবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন