ভয়ঙ্কর গ্রীষ্ম: ভারত-পাকিস্তানে এখনই তাপপ্রবাহ, বাড়ছে চরম বিপদ!

ভয়ংকর গ্রীষ্মের পূর্বাভাস: ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহ, বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত।

দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রীষ্মের দাবদাহ সাধারণত মে মাস থেকে শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত চলে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার গ্রীষ্মের এই তীব্রতা দেখা যাচ্ছে এপ্রিল মাসেই।

ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইতোমধ্যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের মতে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রবণতা বাংলাদেশের জন্যও এক অশনি সংকেত।

আবহাওয়াবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে গরম বাড়ছে। ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের আবহাওয়াবিদ জি.পি. শর্মা জানিয়েছেন, “বসন্তকালের স্বল্প সময় পার হওয়ার পরেই গ্রীষ্মের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”

দক্ষিণ এশিয়া, যেখানে প্রায় ১৯০ কোটি মানুষের বসবাস, চরম তাপমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানকার অনেক মানুষ অসহনীয় গরমের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় জল ও শীতলীকরণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

দিল্লির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জিয়ানমারকো মेंगेলদোর মতে, “এপ্রিল মাসের তাপপ্রবাহ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সংকেত। এখন সচেতনতা থেকে বেরিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।”

ভারতে জয়পুরের তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর পর নির্মাণ শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে হিট স্ট্রোকের খবর পাওয়া গেছে।

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংখ্যক দিন তাপপ্রবাহ দেখা যেতে পারে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সিন্ধু প্রদেশের শাহীদ বেনজিরআবাদ শহরে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

দেশটির একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন ঘটনাগুলো এখন আর বিরল নয়, বরং এটি সাধারণ হয়ে উঠছে। কিন্তু এই সংকট মোকাবিলায় দেশটি এখনো প্রস্তুত নয়।”

শহরগুলোতে উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টি পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যেকার সময়ের সঙ্গে ১৯৮৭ থেকে ২০২৩ সালের তথ্য তুলনা করে দেখা গেছে, দিল্লি ও ইসলামাবাদের মতো শহরগুলোতে তাপমাত্রা আশপাশের গ্রামীণ এলাকার চেয়ে গড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আমরা আর তাপপ্রবাহের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছি না, বরং কোন মাত্রায় আমরা পৌঁছাচ্ছি, সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য, তবে আমাদের অবকাঠামো সেভাবে তৈরি হয়নি।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা মানুষের জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত নয়।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ২০৫০ বা ২০৭০ সালের জন্য পূর্বাভাস দেওয়া অনেক ঘটনাই এখন ঘটছে।

ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইন্টিফিক রিসার্চের জলবায়ু বিজ্ঞানী ডেভিড ফারান্দা বলেছেন, “জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোই এর একমাত্র সমাধান।

এছাড়া, উন্নত আবাসন ব্যবস্থা, সবুজ জ্বালানির ব্যবহার এবং জলবায়ু স্থিতিশীলতা তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং দুর্বল অবকাঠামো একটি বড় বাধা। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভারতে ইতোমধ্যে তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বয়স্ক ও শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এর যথাযথ বাস্তবায়ন এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

ফারান্দা বলছেন, অনেক দেশের পক্ষেই এখন জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের গ্রিড দুর্বল হয়ে পড়ায় লোডশেডিং বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের আরও ভালো মানের বাড়ি তৈরি করতে হবে, যা তাপ শোষণ করবে না।

একইসঙ্গে, বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে এবং সবুজ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে হবে।

বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি একটি সতর্কবার্তা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশও চরম আবহাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এখনই এর মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *