ভারতে ‘সিন্দুর অভিযান’, পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: হতাহতের খবর।
বুধবার মধ্যরাতের পর, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’র ওপর হামলা চালায়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিন্দুর’।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সামরিক বাহিনী তাদের ভূখণ্ডে অন্তত ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যাতে আটজন নিহত এবং ৩৫ জনের বেশি আহত হয়েছে।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও ভারতীয় হামলার খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানি সামরিক সূত্র দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে, ভারত এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, পাকিস্তানি গোলার আঘাতে ভারতীয় অংশে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
কাশ্মীর উপত্যকা, যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত, একটি বিতর্কিত অঞ্চল। এর একদিকে রয়েছে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর, অন্যদিকে ভারত-শাসিত কাশ্মীর।
এই দুই অঞ্চলের মধ্যেকার সীমান্তকে নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control বা LoC) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে এই সীমান্ত নির্ধারিত হয়।
পরে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর, দুই দেশ ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং LoC-কে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রধানত মুসলিম। পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে প্রায় ৪০ লক্ষ এবং ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের বসবাস।
জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারত, পাকিস্তান এবং চীন—এই তিনটি দেশেরই ভিন্ন ভিন্ন দাবি রয়েছে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গিলগিত-বালতিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর (পাকিস্তান)।
অন্যদিকে, ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা, শ্রীনগর, জম্মু ও লাদাখ।
উল্লেখ্য, গত ২২শে এপ্রিল, ভারতীয়-শাসিত কাশ্মীরের পাহালগামে একদল পর্যটকের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়, যাতে ২৬ জন নিহত হয়।
এই ঘটনার জন্য একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)-কে দায়ী করা হয়। ভারত মনে করে, পাকিস্তানের মদদে এই হামলা চালানো হয়েছে।
যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ উত্তপ্ত ছিল। ভিসা বাতিল, কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার এবং আকাশসীমা বন্ধ করার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা