কাশ্মীর পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, সীমান্তে গোলাগুলি বিনিময়।
জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে আবারও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পাহালগামে এক প্রাণঘাতী হামলার জের ধরে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে এবং এর পুরোটার উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে। তবে বর্তমানে এই অঞ্চলের কিছু অংশ ভারত এবং কিছু অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ নিয়েই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে উত্তেজনা বিদ্যমান, যা মাঝে মাঝেই সহিংস রূপ নেয়।
ভারতীয় সেনা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, শুক্রবার পাকিস্তান গুলি চালানো শুরু করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একজন সরকারি কর্মকর্তা এএফপি বার্তা সংস্থাকে নিশ্চিত করেছেন যে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি বিনিময় হয়েছে। তবে কে প্রথম গুলি ছুড়েছিল, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, “সাধারণ মানুষের উপর কোনো গোলাগুলি চালানো হয়নি।”
গোলাগুলি বিনিময়ের ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি)-র ঠিক কোন স্থানে ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি ওমর মেহরাজ জানিয়েছেন, বান্দিপোরায় পৃথক একটি ঘটনায় দুজন আহত হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার, সন্দেহভাজন বিদ্রোহীরা পাহালগামের একটি রিসোর্টে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
“দ্য রেসিস্টেন্স ফ্রন্ট” (টিআরএফ)-এর নামে এই হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। এই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভারতীয় পুলিশ তিনজনের সন্ধান চেয়ে ২ মিলিয়ন ভারতীয় রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার সমান) পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
এই ঘটনার পর নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে তীব্র কূটনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত, সিন্ধু জল চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে এবং পাকিস্তান, ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে একটি খাল সেচ প্রকল্পের কাজও স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ফলে সম্পর্ক কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ইসলামাবাদের জড়িত থাকার অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই কাশ্মীরে ভারতের ‘দখলদারিত্বের’ সমস্যার সমাধান হবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ সম্ভব নয়।” কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) ভালোভাবে সুরক্ষিত রয়েছে।
শুক্রবার, ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পাহালগাম সফর করেন এবং সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলাকারীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার করেছেন।
পাহালগামে অবস্থান করা আল জাজিরার প্রতিনিধি মেহরাজ জানিয়েছেন, “প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চালাচ্ছে। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শত শত মানুষকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “স্থানীয় বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছেন, কারণ তাঁরা আশঙ্কা করছেন যে তাঁরা যেন উভয়পক্ষের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।”
এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান ঘোষণা করেছেন, ভারত যদি তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে, তাহলে পাকিস্তান জবাব দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ সক্ষম এবং প্রস্তুত রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “পাকিস্তানি জাতি শান্তি চায়, তবে কেউ তাদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং তাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার লঙ্ঘন করতে পারবে না।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা