কাশ্মীরে ফের উত্তেজনা! ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কী ঘটবে?

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি, উদ্বেগে আন্তর্জাতিক মহল।

জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বেড়েছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে।

দুই দেশই কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যিকভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে, যা সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

কাশ্মীর নিয়ে এই উত্তেজনা কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা কয়েকটি কারণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হলো:

সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা:

জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনার পর ভারত সীমান্তের ওপারে সীমিত সামরিক অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা যেকোনো ধরনের আক্রমণের সমুচিত জবাব দেবে।

এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো পক্ষের উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে পারে। অতীতেও এই দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে।

২০১৯ সালে পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি:

ভারত ও পাকিস্তানের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কোনো ধরনের যুদ্ধ হলে তা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।

চীনের সংশ্লিষ্টতা:

চীন ও ভারতের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। ২০২০ সালে বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে দেশ দুটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।

যদিও বর্তমানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা ভালো হয়েছে, সীমান্তে এখনো বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রয়েছে।

চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং চীন পাকিস্তানকে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান।

জল নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা:

জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর ভারত, পাকিস্তানের দিকে বয়ে যাওয়া নদীর জল সরবরাহ বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো পদক্ষেপ নিলে, পাকিস্তান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।

সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে ছয়টি নদীর জল পাকিস্তানে অবাধে সরবরাহ করতে হয়। জল সরবরাহ বন্ধ হলে, পানির অভাবে পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ভারতের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক হত্যা ও নির্বিচারে গ্রেফতারের অভিযোগ এনেছে।

আন্তর্জাতিক মহলের অনেকে মনে করেন, ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বিশ্ব শক্তিগুলো যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সংঘাত শুরু হলে, তা শুধু এই দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

কারণ, এক্ষেত্রে তাদের কৌশলগত মিত্রদেরও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে।

কারণ, এমন ঘটনা ঘটলে তা বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, শরণার্থীর আগমনও একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *