**কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি**
জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হামলার জন্য পরস্পরকে দায়ী করে দুই দেশই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সকল চুক্তি, বিশেষ করে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, বুধবার ভারত সরকার সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল এবং সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে ভারতের জল সরবরাহ বন্ধ করাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে গণ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়ে পাকিস্তান জানায়, তারা এর সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মধ্যে অন্যতম ছিল, ৬৪ বছর পুরোনো সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা।
এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশই তাদের কৃষিজমির জন্য জল ব্যবহারের সুযোগ পেত।
এছাড়াও, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যা কমানো, সার্ক স্কিমের আওতায় থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ত্যাগ এবং ভারতে কর্মরত পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনার পরেই এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়।
এই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারত সরকার সরাসরি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অবশ্য ভারতের এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার ভারতীয় পদক্ষেপগুলোকে ‘অপরিণত ও তাড়াহুড়ো করে নেওয়া’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ভারত এখনো পর্যন্ত হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।’
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ বহু পুরনো।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে।
উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে।
এরই মধ্যে এই অঞ্চল নিয়ে দু’দেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ভবিষ্যতে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অতীতেও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছিল।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তারা এটাও বলছেন যে পাকিস্তান যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ‘আমরা উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছি।
তবে ভারতের মতো আমরা উত্তেজনা তৈরি করতে চাই না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সের সম্প্রতি ভারত সফর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশকেই পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং কোনো ভুল পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা