পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক যুদ্ধের চিরাচরিত ধারণার থেকে বেশ আলাদা। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশ দুটি তিনটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ লড়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যেকার সংঘাতের চরিত্র সবসময়ই ভিন্ন।
পারমাণবিক অস্ত্রের ভীতি এবং কাশ্মীর নিয়ে চলমান বিবাদ – এই দুইয়ের প্রভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রায়ই নিয়ন্ত্রিত থাকে, যা অন্য অনেক দেশের সাথে তাদের পার্থক্য তৈরি করে।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে কর্মরত নিরাপত্তা বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর মতে, “পাকিস্তান ও ভারতের কাছে এত পারমাণবিক অস্ত্র আছে যা উভয়পক্ষকে কয়েকবার ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।” এই অস্ত্রের ভাণ্ডার উভয় দেশের জন্যই পারস্পরিক ধ্বংসের এক নিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
উভয় দেশই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ও পাল্লা এমনভাবে তৈরি করেছে, যা প্রতিপক্ষকে পারস্পরিক ধ্বংসের (Mutual Assured Destruction – MAD) ধারণাটি মনে করিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উভয় দেশের কাছেই প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যেগুলি স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে নিক্ষেপযোগ্য।
তবে, উভয় দেশের অস্ত্রভাণ্ডারের গোপনীয়তার কারণে কেউ নিশ্চিত নয় যে, প্রথম আঘাত হানার পর কোনো পক্ষ ‘দ্বিতীয় আঘাত হানার ক্ষমতা’ (second-strike capability) বজায় রাখতে পারবে কিনা।
এই ক্ষমতা প্রতিপক্ষকে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি থেকে বিরত রাখে।
কাশ্মীর সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৪৭ সাল থেকে উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে।
এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই সীমান্ত সংঘর্ষ হয়। কাশ্মীরকে দুটি দেশ সামরিকীকরণের মাধ্যমে বিভক্ত করে রেখেছে।
কাশ্মীর নিয়ে তিনটি যুদ্ধও হয়েছে, যেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অনেক কাশ্মীরি মুসলিম হয় পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চায়, অথবা একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকতে আগ্রহী।
সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ভারত ২০২৫ সালে প্রতিরক্ষা খাতে ৭৪.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।
যেখানে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও পাকিস্তানের দ্বিগুণ। ভারতের সামরিক বাহিনী মূলত পাকিস্তানের দিকে নজর রাখলেও, চীন এবং ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না।
উভয় দেশই সামরিক পদক্ষেপের ঘোষণা দিতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control – LoC) বরাবর প্রায়ই সংঘর্ষ হয়, যা গণমাধ্যমের জন্য দুর্গম হওয়ায় তাৎক্ষণিক তথ্যের সত্যতা যাচাই করা কঠিন।
এসব ঘটনার মূল উদ্দেশ্য থাকে প্রতিপক্ষকে বিব্রত করা বা ক্ষুব্ধ করে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার এই সংঘাতগুলো মূলত জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে সংঘটিত হয়। উভয় দেশেরই জনসাধারণের উপর বড় ধরনের আঘাত হানার কোনো ইচ্ছা নেই।
তারা একে অপরের ভূখণ্ড দখলেরও চেষ্টা করে না, যা তাদের মধ্যেকার যুদ্ধের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস