ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: শান্তির বার্তা সত্ত্বেও দুর্বলতা প্রকাশ?
সম্প্রতি কাশ্মীর সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে, তেমনই দুই দেশই সামরিক শক্তি প্রদর্শনে তৎপর হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের পদক্ষেপগুলো তাদের দুর্বলতাই প্রকাশ করেছে।
গত ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর সন্ত্রাসী হামলায় ভারত সরকার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়।
এরপর ৭ই মে, ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি অভিযান শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল টিআরএফ-এর ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা। ভারতের দাবি, টিআরএফ-কে পাকিস্তান মদদ যোগাচ্ছে।
এই অভিযানে ফরাসি যুদ্ধবিমান ‘রাফায়েল’ ব্যবহার করা হয়, যা মোদী সরকারের ‘শক্তিশালী’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা ছিল।
কিন্তু পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় তাদের বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।
পাল্টা জবাবে, পাকিস্তানও ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতীয় বিমানবাহিনীর কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করারও দাবি করে।
যদিও ভারত সরকার তাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি।
এমনকি, ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রথমে পাকিস্তানের করাচি সমুদ্রবন্দরে হামলার খবর প্রচার করা হলেও, পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর, ভারতের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অনেকে মনে করছেন, এই যুদ্ধবিরতি ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপেরই ফল। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ভারতের দীর্ঘদিনের নীতিকে দুর্বল করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে ভারতের সামরিক সক্ষমতা এবং কৌশলগত দুর্বলতাগুলো প্রকাশ হয়েছে।
বিশেষ করে, চীনের সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সামরিক খাতে চীনের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সরকার সম্ভবত রাফায়েল যুদ্ধবিমানের সক্ষমতা এবং পাকিস্তানের চীনা প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক সরঞ্জামের বিষয়টি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অতীতে অনেক সতর্কবার্তা সত্ত্বেও, ভারত সরকার চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়নি।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশেরই সংযম অবলম্বন করা উচিত।
বিশেষ করে, কাশ্মীর এবং আফগানিস্তান সহ বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতা কমাতে উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
কারণ, এই অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগ ডেকে আনতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দারিদ্র্য একটি বড় সমস্যা।
ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ দরিদ্র এবং কোটি কোটি মানুষ নিরক্ষর।
এমন পরিস্থিতিতে, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এই অঞ্চলের উন্নয়নের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা