ভারতের ইস্পাত উৎপাদন বৃদ্ধি: জলবায়ু লক্ষ্য এবং আঞ্চলিক উদ্বেগের সৃষ্টি।
ভারতে ইস্পাত উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা দেশটির জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে, এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে শিল্পকে দূষণমুক্ত করার প্রচেষ্টাকেও কঠিন করে তুলবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনে ভারতের কার্বন নিঃসরণ এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গ্লোবাল এনার্জি মনিটর (জিইএম) নামক একটি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত ইস্পাত উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানের ২০০ মিলিয়ন টন থেকে বাড়িয়ে ৩৩০ মিলিয়ন টনে উন্নীত করতে চাইছে। কিন্তু এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা দেশের পরিবেশগত অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
কারণ, বর্তমানে ইস্পাত তৈরির জন্য ভারত মূলত কয়লার ওপর নির্ভরশীল। এই কয়লা নির্ভরতা কার্বন নিঃসরণ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ইস্পাত শিল্প বর্তমানে দেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১২ শতাংশের জন্য দায়ী। উৎপাদন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলতে থাকলে, আগামী পাঁচ বছরে এই হিসেব দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ভারত সরকার নিয়েছে, তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ইস্পাত উৎপাদনের অন্তত ৩৭ শতাংশকে কম কার্বন নিঃসরণকারী প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু জিইএমের তথ্য বলছে, ভারতের কয়লা নির্ভরতার কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ইস্পাত শিল্পের এই কার্বন-নিঃসরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, তা শুধু ভারতের জন্যই নয়, বরং পুরো বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে, ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে দেশটি ১০০ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাইলফলকও অর্জন করেছে।
তবে, ভারতের ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ এখনো পুরোপুরি নির্ধারিত হয়নি। জিইএমের গবেষণা বিশ্লেষক হেন্না খাদিজা জানিয়েছেন, “পরিকল্পিত উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ এখনো নির্মাণাধীন। ফলে, এখনো কম কার্বন নিঃসরণকারী প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে পারে ভারত।”
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতের ইস্পাত শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের সামান্য অংশ রপ্তানি করা হয়। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান বাজারগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কর আরোপ করার কারণে, ভারতের ইস্পাত রপ্তানিতেও সমস্যা হতে পারে।
সাসটেইনেবল ফিউচার্স কোলাবোরেটিভের ইশ্বরন নরসিমহনের মতে, “প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে ইস্পাতকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে পারলে, ভারতের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।”
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস