ভারত কি ট্রাম্পকে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছে? জানা গেল আসল সত্যি!

**ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনা: শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন এবং বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন যে ভারত, তাদের দেশের পণ্যগুলির উপর প্রায় ‘শূন্য শুল্ক’ আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে।

তবে, নয়াদিল্লি চাইছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে, সেই লক্ষ্যেই এই আলোচনা চলছে। এই প্রেক্ষাপটে, দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য আলোচনার গতিপ্রকৃতি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হোয়াইট হাউস সফরের পরেই এই বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়। উভয় পক্ষই এই বছর একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চূড়ান্ত করতে রাজি হয়েছে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশের উপর শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। এমনকি কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে তারা শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

অন্যদিকে, আমেরিকাও ভারতের বাজারের জন্য কিছু বিশেষ পণ্যের প্রবেশাধিকার সহজ করতে চাইছে।

এই আলোচনার মূল বিষয় হল শুল্ক হার কমানো। বর্তমানে, ভারতের গড় শুল্ক হার ১৭ শতাংশ, যেখানে আমেরিকার গড় শুল্ক হার মাত্র ৩.৩ শতাংশ।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের উচ্চ শুল্ক হারের সমালোচনা করে আসছিলেন। তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের পণ্যের উপর পাল্টা ২৭ শতাংশ শুল্ক বসাতে পারে।

যদিও বর্তমানে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে।

এই মুহূর্তে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য প্রায় ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। গত বছর ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার ৫৭ কোটি ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় রেখেছিল।

মূলত, ওষুধ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং গহনার মতো পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়ে থাকে।

আলোচনা সফল করতে, ভারত সরকার ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের উপর শুল্ক কমানো শুরু করেছে। যেমন, কিছু বিশেষ ধরনের হুইস্কি এবং হার্লে-ডেভিডসন মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে।

তবে, এই বাণিজ্য চুক্তির কিছু জটিলতাও রয়েছে। ভারতের কৃষকদের আশঙ্কা, এই চুক্তির ফলে বিদেশি পণ্যের আমদানি সহজ হয়ে গেলে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এছাড়াও, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও ভারতের অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতকে চীনের প্রভাবের মোকাবিলায় ব্যবহার করতে। অন্যদিকে, চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী।

গত বছর চীন থেকে ভারত ১১ হাজার ৩শ’ ৪৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪ হাজার কোটি ডলারের।

এই পরিস্থিতিতে, ভারত সরকার অত্যন্ত সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা চাইছে, এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তি থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর শুল্ক কমানোর পক্ষপাতী, সকলের জন্য অবাধ বাণিজ্য চুক্তি করার চেয়ে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির ফলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, এই ধরনের চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বা অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে, আবার বাজারের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে দুই দেশের মধ্যেকার চূড়ান্ত চুক্তির জন্য।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *