ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তি: নতুন আইনের ছায়ায় অধিকার হারানোর শঙ্কা।
ভারতে ওয়াকফ আইন (সংশোধনী)-এর মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই আইন নিয়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
তাঁদের আশঙ্কা, এই আইনের ফলে ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসা ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার বিষয়টি দুর্বল হয়ে পড়বে।
ওয়াকফ আসলে কী? ইসলামি আইনে, ওয়াকফ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে সম্পত্তির মালিকানা আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয় এবং এর মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজ করা হয়।
এই সম্পত্তি সাধারণত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য সেবামূলক কাজে ব্যয়িত হয়। ওয়াকফ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন ‘মুতাওয়াল্লি’, যিনি এই সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করেন।
নতুন আইনে ওয়াকফ সম্পত্তির সংজ্ঞা এবং এর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে, কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবহার ও ঐতিহ্যের একটি ভূমিকা ছিল।
কিন্তু সংশোধিত আইনে, সরকারের একজন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ, এখন থেকে সরকারের কোনো প্রতিনিধিই নির্ধারণ করতে পারবেন, কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা।
ফলে, ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে একটি একতরফা ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, যা অনেক সমালোচকের মতে, কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এছাড়াও, এই আইনে ওয়াকফ বোর্ডের কার্যক্রমে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, কোনো ধর্মীয় ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় অন্য ধর্মের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
কারণ, এর ফলে ওয়াকফের ঐতিহ্য এবং স্বকীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি নিরীক্ষণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিরীক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো ওয়াকফ বোর্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
তবে অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির অধিকার দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ভারতে ওয়াকফ আইনের এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের অনেক মানুষ তাঁদের ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।