ভারতে মোদি সরকারের নতুন বিলে মুসলিমদের মধ্যে চরম উদ্বেগ!

ভারতে মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত বিল পাশ হয়েছে, যা দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কর্তৃক উত্থাপিত এই বিলটি ওয়াকফ আইন সংশোধন করতে চাইছে, যার মাধ্যমে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হবে।

ওয়াকফ হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি। নতুন বিলে ওয়াকফ বোর্ডগুলোতে অ-মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং সরকারের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, যা এইসব সম্পত্তির মালিকানা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিজেপি সরকারের যুক্তি হলো, এই পরিবর্তনের ফলে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করা যাবে এবং বৈচিত্র্য আসবে।

তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, এর ফলে ঐতিহাসিক মসজিদ, দোকান, মাজার, কবরস্থান এবং বিশাল জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা হাতছাড়া হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বুধবার, ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়। বিরোধী দল কংগ্রেস এটিকে অসাংবিধানিক এবং মুসলিম বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদিও, বিজেপি তাদের জোটের সমর্থন নিয়ে বিলটি পাস করতে সক্ষম হয়েছে।

নিম্নকক্ষে বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ২৮৮টি, এবং বিপক্ষে ছিল ২৩২টি ভোট। বর্তমানে বিলটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে বিবেচনাধীন রয়েছে এবং সেখানে অনুমোদন পেলে এটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতির জন্য পাঠানো হবে।

বিলটিতে ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত নিয়মাবলী পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনেক পুরনো মসজিদ, মাজার ও কবরস্থানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এইসব সম্পত্তির অনেকেরই যথাযথ কাগজপত্র নেই, যা বহু বছর আগে কোনো আইনি রেকর্ড ছাড়াই দান করা হয়েছিল।

ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে মোদী সরকার মুসলিমদের সম্পত্তিগুলোর উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে। এমন এক সময়ে যখন তাদের উপর বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ বাড়ছে, তখন এই বিল তাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতে প্রায় এক মিলিয়ন একর জমির উপর ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যা মরিশাস দ্বীপের দ্বিগুণ। এই সম্পত্তিগুলো রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে গঠিত ৩২টি ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে দেখাশোনা করা হয়।

প্রতিটি বোর্ডের সদস্য হিসেবে সরকার মনোনীত ব্যক্তি, মুসলিম আইনপ্রণেতা, পণ্ডিত এবং তত্ত্বাবধায়ক (যাদের ‘মুতাওয়াল্লি’ বলা হয়) অন্তর্ভুক্ত থাকেন। বর্তমানে, এই বোর্ডের সকল সদস্যই মুসলিম সম্প্রদায়ের হয়ে থাকেন।

বিতর্কের সময়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন যে অ-মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে। তাদের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। তিনি আরও যোগ করেন, এই সদস্যরা আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা এবং অনুদানগুলো সঠিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এই বিলটি ‘মুসলিমদের কোণঠাসা করার এবং তাদের ব্যক্তিগত আইন ও সম্পত্তির অধিকার হরণের একটি হাতিয়ার’। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) বিলটিকে ‘বৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক এবং মুসলিম নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংগঠনটি এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এবং প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।

এআইএমপিএলবি-এর একজন কর্মকর্তা কামাল ফারুকী প্রশ্ন করেন, ‘যদি ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলমানদের জন্য দুটি পদ সংরক্ষিত থাকে, তবে হিন্দু মন্দিরগুলোর বোর্ডে কি মুসলমানদের জন্য একই ধরনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে?’

ভারতে ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমরা ১৪ শতাংশ। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বৃহত্তম সংখ্যালঘু এবং দরিদ্রতম একটি অংশ।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *