যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে এক মর্মান্তিক ঘটনার জেরে মানব পাচারের অভিযোগে দুই ব্যক্তির কারাদণ্ডের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিন বছর আগে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি পরিবারের চার সদস্য – জগদীশ প্যাটেল, তাঁর স্ত্রী বৈশালী, ১১ বছর বয়সী কন্যা বিহাঙ্গী এবং ৩ বছরের শিশুপুত্র ধর্মিক – তুষারঝড়ের মধ্যে কানাডার সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ঠান্ডায় জমে মারা যান।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির বুধবার (যদি সম্ভব হয় তবে তারিখ উল্লেখ করুন) মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি আদালতে সাজা ঘোষণার কথা রয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, পাচার চক্রের মূল হোতা ছিলেন হার্শকুমার রামলাল প্যাটেল। তিনি ‘ডার্টি হ্যারি’ নামে পরিচিত ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্টিভ অ্যান্টনি শ্যান্ড, যিনি ওই পরিবারটিকে সীমান্ত থেকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। সরকারি কৌঁসুলিরা হার্শকুমার প্যাটেলের জন্য প্রায় ২০ বছর এবং স্টিভ অ্যান্টনি শ্যান্ডের জন্য প্রায় ১১ বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করেছেন।
মিনেসোটার ফেডারেল আদালতের বিচারক জন টুনহাইম গত মাসে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাঁদের সাজা ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
তদন্তে জানা গেছে, হার্শকুমার প্যাটেল এবং স্টিভ অ্যান্টনি শ্যান্ড একটি সুসংগঠিত চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই চক্র ছাত্র ভিসার মাধ্যমে ভারত থেকে লোকজনকে কানাডায় নিয়ে আসত এবং পরে তাঁদের অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করত।
নিহত পরিবারটি গুজরাটের দিনগুচা গ্রামের বাসিন্দা ছিল এবং পেশায় শিক্ষক ছিলেন। জানা যায়, উন্নত জীবনের আশায় গ্রামটির অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বয়ান অনুযায়ী, ভয়াবহ তুষারঝড়ের মধ্যে শিশু ধর্মিককে বাঁচানোর জন্য তাঁর বাবা হিমশীতল বাতাস থেকে মুখ ঢাকতে গিয়ে নিজের হাতে পরা জমাট বাঁধা গ্লাভস দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। বিহাঙ্গীর পায়ে ছিল অনুপযুক্ত বুট এবং হাতে গ্লাভস।
মা সম্ভবত মুক্তির আশায় একটি তারের বেড়ার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল।
ওই পরিবারের সঙ্গে আসা আরও সাতজন সীমান্ত অতিক্রম করতে পারলেও, শ্যান্ডের ভ্যান পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল মাত্র দুইজন। তাঁদের মধ্যে একজন গুরুতর ফ্রস্টবাইটের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
অপর একজন জানিয়েছেন, তিনি আগে কখনো বরফ দেখেননি। তাঁদের পরনে থাকা শীতের পোশাক পাচারকারীদের দেওয়া ছিল, যা ছিল খুবই সামান্য।
সরকারি কৌঁসুলি মাইকেল ম্যাকব্রাইড জানিয়েছেন, হার্শকুমার প্যাটেল তাঁর কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখাননি। এমনকি, বিচারের সময়ও তিনি ‘ডার্টি হ্যারি’ হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
ম্যাকব্রাইড আরও বলেন, শ্যান্ড তখন টেক্সট মেসেজে প্যাটেলকে পাঠিয়েছিলেন, “আমরা কোনো টাকা হারাতে চাই না।” শ্যান্ডকে যখন সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী আটক করে, তখন তিনি প্রথমে সেখানে আরও কেউ আছে বলে অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। হার্শকুমার প্যাটেলের আইনজীবীরা তাঁর জামিনের আবেদন করেছেন।
শ্যান্ডের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জন্য কম শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শ্যান্ড কেবল একজন ট্যাক্সিচালক ছিলেন এবং তাঁর পরিবারকে বাঁচানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল।
এই ঘটনার মাধ্যমে মানব পাচারের ভয়াবহতা আবারও সামনে এসেছে। উন্নত জীবনের আশায় মানুষ যে কতটা ঝুঁকি নিতে পারে, তা এই ঘটনা প্রমাণ করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস