ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার দায়ে ভারতের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আলী খান মাহমুদাবাদ নামের ওই অধ্যাপককে সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েকদিন পরই গ্রেফতার করা হয়। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা, বিদ্রোহের প্ররোচনা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৪২ বছর বয়সী মাহমুদাবাদকে নয়াদিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়, যা হরিয়ানা রাজ্যের সোনেপতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
জানা গেছে, গত শনিবার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হরিয়ানা রাজ্য শাখার যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাঠেরির অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
অধ্যাপক মাহমুদাবাদের গ্রেফতারের কয়েক দিন আগে, হরিয়ানা রাজ্যের নারী কমিশন তাকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য তলব করে।
৬ মে তারিখে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুইরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং মিডিয়া ব্রিফিং করেন।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মাহমুদাবাদ মন্তব্য করেন, “কর্নেল সোফিয়া কুইরেশিকে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি, তবে আমি আশা করি তারা বিজেপির ঘৃণা প্রচারণার শিকার হওয়া মুসলিমদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর এবং বিচারবহির্ভূত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন।”
অধ্যাপকের ওই পোস্টে মুসলিমবিরোধী বিভিন্ন বিষয় যেমন – বিচার ছাড়া তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও গণহত্যার মতো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে, হরিয়ানা নারী কমিশন সোমবার জানায়, অধ্যাপকের মন্তব্য “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের অসম্মান করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করেছে”।
মাহমুদাবাদ তার মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এবং বলেছেন, তার কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাগরিক এবং সৈনিক উভয়ের জীবন রক্ষা করা। তার মন্তব্যে নারীদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ ছিল না।
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত বছর মুসলিমদের সম্পত্তি ধ্বংসের বিরুদ্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। তারা একে ‘নিষ্ঠুর ও ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের দাবি জানায়।
অন্যদিকে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বুলডোজার দিয়ে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ভাঙার ওপর স্থগিতাদেশ দিলেও কর্তৃপক্ষের মধ্যে তা উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারকেও বিভিন্ন সময় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক নষ্ট করারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও মোদি সরকার গরুর মাংস ভক্ষণকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তবে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আলী খান মাহমুদাবাদের সমর্থনে দেশের অধ্যাপক ও অ্যাক্টিভিস্টরা এগিয়ে এসেছেন।
শুক্রবার প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে প্রায় ১,২০০ জন স্বাক্ষর করেন।
চিঠিতে বলা হয়, অধ্যাপক খান সশস্ত্র বাহিনীর কৌশলগত সংযমকে সমর্থন করেছেন এবং মিডিয়া ব্রিফিংয়ের জন্য নারী কর্মকর্তাদের বেছে নেওয়াকে “গুরুত্বপূর্ণ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। এর আগে দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হয়।
পাকিস্তানের হামলায় অন্তত ১৫ জন এবং ভারতের হামলায় ৩১ জন নিহত হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা