মৃত্যুর আগে নিজের মৃত্যুসংবাদ লিখে গেলেন বৃদ্ধ! এমন ঘটনা আগে দেখেননি!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী গ্যারি উলফেল্ট, যিনি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগে নিজের মৃত্যুর খবরটি নিজেই লিখে গিয়েছিলেন। তার এই আত্মজীবনীমূলক লেখায় জীবনের নানা উত্থান-পতনের কথা হাস্যরসের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

খবরটি এখন সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয়।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গ্যারি উলফেল্ট নামের ওই ব্যক্তি গত ৫ই মে, ওহাইওতে নিজের তৈরি করা একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে, তিনি তার জীবনের কথা উল্লেখ করে একটি শোকসংবাদ তৈরি করেন, যা মৃত্যুর তিন দিন পর, অর্থাৎ ৮ই মে প্রকাশিত হয়।

শোকসংবাদে উলফেল্ট তার জীবনের বেশ কিছু বিপদসংকুল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি এখন পুরোপুরি মৃত।” তিনি আরও জানান, “জীবনে অনেকবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি। সম্ভবত, এত দিন পর্যন্ত আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, সেটাই আশ্চর্যের।”

গ্যারি উলফেল্ট তার শোকসংবাদে উল্লেখ করেন, “ছোটবেলায় স্কুলে থাকাকালীন সময়ে, একটি বেসবল এসে আমার কপালে লাগে। একবার আমার বোনের ঘোড়ার লাথি খেয়েছিলাম, এমনকি গাড়ির ধাক্কাও খেয়েছি। একবার তো একটি বিশাল ইটের তৈরি চিমনি আমার মাথার উপর পড়তে গিয়েও রক্ষা পাই।”

তিনি আরও জানান, “আমার পঞ্চাশের দশকে অফিসের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কয়েকশ পাউন্ড ওজনের একটি লোহার সিন্দুক আমার ওপর পড়ে যায়, যার ফলে আমি গুরুতর আহত হয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত, কোনো হাড় ভাঙেনি বা অভ্যন্তরীণ আঘাতও লাগেনি।”

ষাট বছর বয়সে একটি উঁচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর, চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি জানতে পারেন যে তার প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়েছে। যদিও ক্যান্সারটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়েছিল, সত্তরের কোঠায় পৌঁছানোর পর তাকে প্রোস্টেট অপসারণের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল।

“অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিল, কিন্তু এরপরে শরীরে এমন কিছু জটিলতা দেখা দেয় যা আমাকে প্রায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল।” – তিনি লেখেন।

শোকসংবাদে উলফেল্ট আরও যোগ করেন, “আমি ঠিক কোন পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছি, তা বিস্তারিতভাবে এখানে বলতে পারছি না। কারণ, আমার মৃত্যুর আগে আমি এই শোকসংবাদটি লিখেছিলাম। আমার মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনাগুলো হয়তো অন্য কেউ যোগ করবেন।”

গ্যারি উলফেল্ট তার শোকসংবাদে, জীবনে কারো প্রতি কোনো খারাপ ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। বিশেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অ্যানোমা হারগিসকে তিনি বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন।

এছাড়াও, ১৯৮২ সালে বিবাহিত স্ত্রী এস্থার চোসনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি লেখেন, “আমার স্ত্রী এস্থার সবসময় আমার প্রতি ভালো ব্যবহার করেছে, এমনকি যখন আমি বাজার করার টাকা বিমানের যন্ত্রাংশ কিনতে খরচ করতাম, তখনও সে আমাকে সমর্থন জুগিয়েছে।”

নিজের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তুলে ধরে উলফেল্ট লেখেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে একই নারীর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছি। একশ’ কর্ডের মতো জ্বালানি কাঠ কেটেছি। গত পঞ্চাশ বছরে অনেকের অনেক সমস্যা সমাধান করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি নিজের উপার্জনে বিল পরিশোধ করেছি। অবসর গ্রহণের পরেই কেবল সামাজিক নিরাপত্তা গ্রহণ করেছি।”

শোকসংবাদের শেষে, উলফেল্টের স্ত্রী এস্থার চোসনেক জানান, “গ্যারি তার স্বপ্নের ‘এক্সপ্রেস এয়ারক্রাফট’ তৈরি করতে ১৭ বছর সময় নিয়েছিলেন।”

গ্যারি উলফেল্টের পরিবারে স্ত্রী, এক ভাই, এক বোন, দুই জামাতা এবং বেশ কয়েকজন ভাতিজা-ভাগ্নে রয়েছেন।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *