ইন্দোনেশিয়ায় কুমিরের উপদ্রব: জীবনযাত্রায় আতঙ্ক
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় সুলাওয়েসি প্রদেশের বুডং-বুডং নদীর আশেপাশে কুমিরের আক্রমণে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। গত বছর দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক কুমির আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলস্বরূপ মানুষের জীবনযাত্রা চরম হুমকির মুখে।
বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যেকার এই সংঘাত এখন গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর, ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ১৭৯টি কুমির আক্রমণের ঘটনা ঘটে, যেখানে ৯২ জন নিহত হয়েছেন।
কুমিরের আক্রমণে আহতদের মধ্যে একজন হলেন ৪৭ বছর বয়সী মুনিরাপা। তিনি জানান, একদিন সকালে বাড়ির কাছে আবর্জনা ফেলতে গিয়ে একটি কুমিরের আক্রমণের শিকার হন।
বিশাল আকারের কুমিরটি (প্রায় ১৩ ফুট লম্বা) তার শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড় বসিয়েছিল। তার স্বামী ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
মুনিরাপাকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে এবং অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তিনি এতটাই ভীত যে বাড়ির পেছনের উঠোনে যেতেও ভয় পান।
বুডং-বুডং নদীর আশেপাশে বসবাসকারী মানুষেরা এখন কুমির আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, গত ১২ বছর ধরে পাম তেল শিল্প গড়ে উঠার পর থেকেই কুমিরের উপদ্রব বেড়েছে।
পাম তেল কোম্পানিগুলো নদী এবং খালের সংযোগ স্থাপন করার ফলে কুমিরগুলো লোকালয়ে প্রবেশ করছে। স্থানীয়রা এখন তাদের পুকুর এবং মাছের ঘেরের চারপাশে কুমিরের আনাগোনা লক্ষ্য করছেন, যা তাদের জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
কুমিরগুলো ইন্দোনেশিয়ায় আইনত সংরক্ষিত প্রজাতি। ফলে, এদের অবাধে শিকার করা যায় না।
স্থানীয় কুমির পালনকারী রুসলি পারাইলি জানান, কুমির শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, আক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি একটি উদ্বেগের বিষয়।
তিনি কুমিরগুলোকে মানুষের থেকে দূরে রাখতে একটি বিশেষ খামার তৈরি করেছেন। সরকারি অনুদান এবং স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি প্রায় ৫০টি কুমিরের দেখাশোনা করেন।
তবে, কুমিরের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রাণী বিশেষজ্ঞ আমির হামিদি। তিনি মনে করেন, কুমিরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
স্থানীয় মৎস্য ও সমুদ্র বিষয়ক বিভাগের প্রধান সুয়ুতি মারজুকি জানান, কুমিরের বাসস্থান পরিবর্তনের কারণে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন – নারকেল সংগ্রহ, মাছ ধরা এমনকি আবর্জনা ফেলার মতো কাজগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক বিকল্পের সন্ধান করছে। কুমিরের চামড়ার ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে, যদিও এটি সংরক্ষণ এবং প্রাণী অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কিত।
স্থানীয় বাসিন্দা সুয়ার্দি জানান, তিনি একবার নদীতে পড়ে যাওয়া নারকেল তুলতে গিয়ে কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
সৌভাগ্যবশত, তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তিনি বলেন, “আমরা এখন সতর্ক থাকি, এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।”
সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন মুনিরাপার মতো ভুক্তভোগীরা।
তারা চান, তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। মুনিরাপা বলেন, “আমি চাই না, আমার সন্তানদের সঙ্গে এমন কিছু ঘটুক।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস