ইন্দোনেশিয়ার চলচ্চিত্র জগতে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করে এবার টেলিভিশন জগতে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন প্রযোজক মনোজ পাঞ্জাবি। সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তিনি পরিচিত ‘এমডি এন্টারটেইনমেন্ট’-এর কর্ণধার হিসেবে, যিনি উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল সব সিনেমা।
এবার তার লক্ষ্য বিনামূল্যে উপভোগ করা যায় এমন টেলিভিশন চ্যানেলকে নতুন রূপে সাজানো।
মনোজ পাঞ্জাবি শুধু একজন সফল চলচ্চিত্র প্রযোজকই নন, বরং ব্যবসার একজন অভিজ্ঞ মানুষও বটে। ২০১৬ সালে তিনি সেরা বক্স অফিস ফিল্মের পুরস্কার জেতেন, যা দর্শকদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল।
তার মতে, এই স্বীকৃতি অস্কারের চেয়েও বেশি মূল্যবান, কারণ এটি দর্শকদের ভালোবাসা প্রমাণ করে। সিনেমা ব্যবসার সাফল্যের মাপকাঠি যে বক্স অফিস, সে কথা ভালো করেই জানেন তিনি। সেই উপলব্ধি থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও টেলিভিশন জগতে পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন তিনি।
গত বছর, মনোজ পাঞ্জাবি প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ইন্দোনেশিয়ার ‘নেট টিভি’-র ৮০ শতাংশ মালিকানা কিনে নেন। এই চ্যানেলটি বিগত দশ বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান করেছে।
কিন্তু মনোজ পাঞ্জাবি বিনামূল্যে সম্প্রচারিত টেলিভিশন চ্যানেলের সম্ভাবনা দেখছেন, যেখানে মানুষ কোনো প্রকার সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই অনুষ্ঠান দেখতে পারে। তার মতে, ইন্দোনেশিয়ার মানুষের বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম হলো এই ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেলগুলো।
ইন্দোনেশিয়ার ভৌগোলিক পরিস্থিতিও বিনামূল্যে সম্প্রচারিত টিভির জন্য সহায়ক। প্রায় ১৭,০০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশে কেবল একটি অ্যান্টেনা ব্যবহার করে সহজেই টেলিভিশন দেখা যায়, যা অত্যন্ত সাশ্রয়ী।
যেখানে উন্নত দেশগুলোতে কেবল সংযোগ সহজলভ্য, সেখানে ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে বিনামূল্যে টেলিভিশন দেখা এখনো জনপ্রিয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এটি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন মানুষ বুঝতে পারে যে বিনামূল্যে সম্প্রচারিত টেলিভিশন এখনো টিকে আছে।
বর্তমানে, মনোজ পাঞ্জাবির কোম্পানি ‘এমডি এন্টারটেইনমেন্ট’ ইন্দোনেশিয়ার চলচ্চিত্র জগতে অন্যতম প্রভাবশালী। তিনি ‘কে কে এন ডি দেসা পেনারি’র মতো ব্যবসা সফল সিনেমা প্রযোজনা করেছেন, যা দেশটির সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করা ছবিগুলোর মধ্যে একটি।
এছাড়াও, তিনি ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ২০টি ব্যবসা সফল সিনেমার মধ্যে ৭টির প্রযোজক।
ব্যবসা এবং বিনোদন জগতের এই প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিবারেরও রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। ১৯৮০-র দশকে, মনোজ পাঞ্জাবির পরিবার বিনোদন ব্যবসায় প্রবেশ করে।
ছোটবেলায় তিনি তার পরিবারের তৈরি সিনেমার অসম্পাদিত ফুটেজ দেখার জন্য স্কুল থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরতেন। দেশভাগের পর তার দাদা ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়ায় আসেন।
১৯৮০-র দশকে, পারিবারিক একটি সংকটের কারণে মনোজ পাঞ্জাবিকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
১৭ বছর বয়সে তিনি অনুভব করেন, জীবন কতটা কঠিন হতে পারে। এরপর তিনি একটি কাগজ ও পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
২০০২ সালে তিনি ‘এমডি এন্টারটেইনমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমানে ফোর্বসের তালিকায় তিনি ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনী (২০২৪), যার সম্পদের পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
মনোজ পাঞ্জাবি জানান, তিনি এমডি এন্টারটেইনমেন্টকে আগামী একশ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে চান এবং ইন্দোনেশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে এর প্রসার ঘটাতে চান।
তার পছন্দের সিনেমার তালিকায় রয়েছে ‘টাইটানিক’, ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’, ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’ এর মতো সিনেমা। জেমস বন্ড এবং অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।
বর্তমানে, নেট টিভি’র নাম পরিবর্তন করে ‘এমডি টিভি’ রাখা হয়েছে। এই চ্যানেলের মাধ্যমে বিনামূল্যে সম্প্রচারিত টেলিভিশনের মান উন্নত করতে চান মনোজ পাঞ্জাবি।
তিনি চান, সিনেমার গল্প বলার ধরন, সেট, আলো এবং দর্শকদের রুচি পরিবর্তন করতে। তার এই চ্যালেঞ্জ কতটা সফল হয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা