যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও, ভবিষ্যতে তা বাড়ার আশঙ্কা। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
টানা তিন মাস ধরে এই ধারা বজায় থাকলেও, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধারণা, গ্রীষ্মকালে এটি আবার বাড়তে পারে। এর কারণ হিসেবে তারা মূলত তৎকালীন ট্রাম্প সরকারের বাণিজ্য নীতিকে দায়ী করছেন।
মার্কিন শ্রম বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল মাসে ভোক্তাপণ্যমূল্য বেড়েছে ২.৩ শতাংশ, যা আগের মাস মার্চে ছিল ২.৪ শতাংশ। এই বৃদ্ধি গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মাসিক হিসাবে দেখলে, মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ০.২ শতাংশ। এর আগে, গত পাঁচ বছরে এমন দাম কমার ঘটনা ঘটেনি।
খুচরা বাজারে স্বস্তি এনে খাদ্যপণ্যের দামও কমেছে। মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে ০.৪ শতাংশ। যা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সবচেয়ে বড় পতন।
ডিমের দাম কমেছে ১২.৭ শতাংশ, যা গত ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে, এক বছর আগের তুলনায় এখনো ডিমের দাম প্রায় ৪৯ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব এখনো অনেক পণ্যের দামে সেভাবে পড়েনি। তাদের ধারণা, জুন বা জুলাই মাস নাগাদ এর প্রভাব দৃশ্যমান হতে পারে।
এপ্রিলের ৫ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া ১০ শতাংশ শুল্কের প্রভাব বাজারে আসতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। এছাড়াও, অনেক কোম্পানি বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমিত হওয়ার আশায় পণ্য মজুত করে রেখেছে, ফলে দাম বাড়ানোর বিষয়টি তারা বিলম্বিত করছে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের প্রাথমিক প্রভাব দেখা গেছে। কম্পিউটার সামগ্রীর দাম বেড়েছে ০.৩ শতাংশ। এছাড়া, চীন থেকে আমদানি করা ক্রীড়া সামগ্রী ও খেলনার দামও বেড়েছে।
শিশুদের স্ট্রলার ও গাড়ির সিটের দামও বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক-এর প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ লরা রোজনার-ওয়ারবার্টন বলেন, “শুল্কের প্রভাব এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মে, জুন এবং জুলাই মাসে এর আরও অনেক প্রভাব দেখা যাবে। এরই মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা পোশাক, জুতা এবং খেলনার দাম বাড়াতে পারে। এই শুল্কের কারণে অনেক কোম্পানি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল।
কিন্তু এখন তারা আবার চীন থেকে পণ্য আমদানি শুরু করতে পারে, যা আসন্ন শরৎকালে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
বর্তমানে, গড় শুল্কের হার প্রায় ১৮ শতাংশ, যা ট্রাম্প প্রশাসনের আগের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। কিছু কোম্পানি এরই মধ্যে দাম বাড়িয়েছে এবং আরও অনেকে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
উদাহরণস্বরূপ, বার্বি পুতুল ও হট হুইলস গাড়ির প্রস্তুতকারক ম্যাটেল ইনকর্পোরেটেড জানিয়েছে, তারা কিছু পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। কারণ তাদের ৪০ শতাংশ পণ্য চীন থেকে আসে।
এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। কারণ, শুল্কের কারণে একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বেকারত্বের ঝুঁকিও।
সাধারণত, বেকারত্ব বাড়লে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমায় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের পণ্যের ওপর কম শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। তবে, অন্যান্য শুল্কের সঙ্গে মিলিত হয়ে এটি চলতি বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেবে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের বাজারেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স ও খাদ্যপণ্যের দামের ওপর এর প্রভাব আসতে পারে।
কারণ, এই পণ্যগুলোর অনেক কিছুই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাই, বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: