গর্ভবতী অবস্থায় ভয়াবহ রোগ, ২ বছর পরও সন্তানকে কোলে নিতে পারেননি এই তারকা!

ঢাকার এক তরুণীর জীবনযুদ্ধ: সন্তানসম্ভবা অবস্থায় ব্রেইন অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হয়েও হার মানেননি, ফিরতে চান মেয়ের কাছে।

২০২৩ সালে, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন জ্যাকলিন মিলার জেমস।

গর্ভবতী অবস্থায় তিনি ব্রেইন অ্যানিউরিজমের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হন।

এরপর অস্ত্রোপচার এবং দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি ফিরে আসতে চান তার মেয়ের কাছে।

জ্যাকলিন, যিনি মূলত একজন সৌন্দর্য বিষয়ক প্রভাবশালী, তার জীবনের গল্পটা যেন এক অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি।

ঘটনার সময় তিনি ছিলেন গর্ভবতী, প্রায় ৩৯ সপ্তাহ।

হঠাৎ করেই তার মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যায়, যার ফলে জরুরি ভিত্তিতে সি-সেকশন এবং মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করতে হয়।

এরপর প্রায় তিন সপ্তাহ তিনি কোমায় ছিলেন।

যখন জ্ঞান ফেরে, তখনো স্বাভাবিক জীবনে ফেরা কঠিন ছিল।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তিনি হয়তো স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে বা হাঁটতে পারবেন না।

কিন্তু জ্যাকলিন ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া।

ধীরে ধীরে তিনি কথা বলতে শুরু করেন, হাঁটাচলার ক্ষমতাও ফিরে পান।

যদিও এখনো তিনি ‘এক্সপ্রেসিভ অ্যাফাসিয়া’ নামক একটি সমস্যায় ভুগছেন, যার কারণে মনের ভাব প্রকাশ করতে মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়, তবুও তিনি থেমে যাননি।

বর্তমানে তিনি ৩৮ বছর বয়সী, এবং তার স্বামী, পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় জীবনকে নতুন করে সাজাচ্ছেন।

জ্যাকলিনের স্বামী, অস্টিন জেমস, সেই ভয়াবহ দিনটির কথা বলতে গিয়ে জানান, কিভাবে তিনি প্রথম তার মেয়ের মুখ দেখেছিলেন।

তাদের মেয়ে, নক্সলি রোজ, জন্মের পর কিছু দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিল।

সেই সময়ে জ্যাকলিনকে পাশে না পাওয়ার কষ্ট ছিল তার জন্য অসহনীয়।

অস্টিন বলেন, “আমি তখনও প্রস্তুত ছিলাম না, কারণ আমার পাশে আমার ভালোবাসার মানুষটি ছিল না।

ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, জ্যাকলিন হয়তো তার মেয়ের প্রথম স্পর্শ বা হাসি কিছুই মনে করতে পারবেন না।

অস্ত্রোপচারের আগে পর্যন্ত কেউই জানতেন না, তিনি এই অবস্থা থেকে আদৌ ফিরে আসতে পারবেন কিনা।

মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের পর, জ্যাকলিনকে আরও কিছু অস্ত্রোপচার করতে হয়।

এরপর তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়।

এরপর শুরু হয় কঠিন এক পথচলা।

জ্যাকলিনের পরিবারের সদস্যরা তাদের বোনের চিকিৎসার জন্য একটি তহবিল গঠন করেন।

অস্টিন জানান, সেই কঠিন সময়ে তিনি ভেঙে না পরে জ্যাকলিন এবং পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি আলাবামায় বড় হয়েছি, তাই সবসময় নিজের অনুভূতিগুলো চেপে রাখতে শিখেছি।

চারপাশে এত মানুষ যখন মানসিক আঘাত এবং উদ্বেগের মধ্যে ছিল, তখন নিজের কষ্টগুলো প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে, ডাক্তাররা জানান জ্যাকলিন হয়তো আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না।

এমনকি তার শরীরের ডান অংশও কাজ নাও করতে পারে।

কিন্তু পরিবারের দৃঢ় মনোবলের কাছে হার মানে সব শঙ্কা।

দীর্ঘ চিকিৎসার পর, জ্যাকলিন ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন।

বর্তমানে তিনি কথা বলতে এবং হাঁটতে পারেন।

চিকিৎসকরা জানান, জ্যাকলিনের সেরে ওঠার পথে ‘নিউরো-ইন্টিগ্রেটিভ ফাংশনাল রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড হ্যাবিলিটেশন (Neuro-IFRAH)’ পদ্ধতি বেশ কার্যকরী হয়েছে।

এই থেরাপি মস্তিষ্কের আঘাতের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।

চিকিৎসার পাশাপাশি, জ্যাকলিন তার মেয়ের জন্য একজন ভালো মা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি এখনো মেয়ের জন্য খাবার তৈরি করেন এবং ডায়াপার পরিবর্তনের মতো কাজগুলোও এক হাতে করার চেষ্টা করেন।

জ্যাকলিন বলেন, “আমি আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভালো অনুভব করি।

আমার মনে হয়, সে-ই আমার জীবনের সেরা পাওয়া।

জ্যাকলিনের এই কঠিন সময়ে, তার পরিবারের সদস্যরা সবসময় তার পাশে ছিলেন।

তারা জানান, জ্যাকলিনের সুস্থতার জন্য তারা সবাই মিলে চেষ্টা করেছেন।

তারা তাদের বোনের আরোগ্য লাভের জন্য সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।

জ্যাকলিন এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন।

তিনি জানেন, তিনি আগের মতো হয়তো আর হতে পারবেন না।

তবে তিনি তার মেয়ের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চান।

তার জন্য জীবন এখন পরিবার এবং ভালোবাসার অন্য এক গল্প।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *