নরওয়ের বিখ্যাত অ্যাথলেটিক পরিবার, ইনগেব্রিগসেনদের ঘিরে ওঠা পারিবারিক কলহের এক চাঞ্চল্যকর চিত্র এখন জনসমক্ষে। ডাবল অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ইয়াকব ইনগেব্রিগসেনের বাবা এবং কোচ, জার্ট ইনগেব্রিগসেনের বিরুদ্ধে তার দুই সন্তান ও কন্যার প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে নরওয়ের একটি আদালতে এই মামলার বিচার চলছে, যেখানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ইয়াকবের বোন, ১৮ বছর বয়সী ইনগ্রিড ইনগেব্রিগসেন জানিয়েছেন, ২০১৮ বা ২০১৯ সালে একবার তার বাবার হাতে তিনি মারধরের শিকার হয়েছিলেন। ইনগ্রিড জানান, তিনি যখন তার বাবার সঙ্গে প্রশিক্ষণে যাচ্ছিলেন, তখন হার্ট-রেট মনিটর নিতে ভুলে গিয়েছিলেন।
এই কারণে জার্ট তাকে ‘অযোগ্য’ এবং ‘বোকা’ বলেছিলেন এবং এক পর্যায়ে তিনি ইনগ্রিডের গালে সজোরে চড় মারেন। ইনগ্রিড আরও জানান, এই ঘটনাটি ছিল তার বাবার দ্বারা সংঘটিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সাতটি ঘটনার মধ্যে একটি।
ইনগ্রিডের সাক্ষ্যে জানা যায়, একবার গাড়িতে বাবা তাকে এমনভাবে ধমক দিয়েছিলেন যে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখতে বা রেডিও পরিবর্তন করতে না পারার কারণে এমনটা হয়েছিল।
ইনগ্রিড আদালতে বলেন, “বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি তাকে ভয় পাই কিনা। আমি এর উত্তর দিতে দ্বিধা বোধ করছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, ‘যদি হ্যাঁ বলি, তাহলে কী হবে? আর যদি না বলি, তাহলে কী হবে?’ তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে কোনো উত্তর দিইনি।
বাবা বারবার একই প্রশ্ন করতে থাকলেন, এবং অবশেষে আমি ‘হ্যাঁ’ বলি।” ইনগ্রিড আরও যোগ করেন, তার বাবা তার উত্তরে সন্তুষ্ট হননি। জার্ট বলেছিলেন, তিনি এর আগে এমন ‘বোকার মতো’ উত্তর শোনেননি এবং তিনি ইনগ্রিডকে তার মায়ের কাছে এই বিষয়ে কিছু না বলার জন্য চাপ দেন।
আদালতে পেশ করা অভিযোগনামায় জানা যায়, জার্ট ইনগ্রিডকে বিভিন্নভাবে ভীতি প্রদর্শন, জোর করা, স্বাধীনতা হরণ এবং নির্যাতনের মতো কাজ করেছেন। ইনগ্রিড অসুস্থ হলে তাকে ‘idiot’ বলার অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়া, একবার ঝগড়ার সময় জার্ট দু’হাত দিয়ে ইনগ্রিডকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, ইয়াকব ইনগেব্রিগসেন আদালতে জানান, পরিবারকে নিয়ে তৈরি হওয়া টিভি সিরিজ ‘টিম ইনগেব্রিগসেন’-এ তাদের পরিবারের বাস্তব চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। তিনি বলেন, ক্যামেরার সামনে তাদের পরিবারের চিত্র ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হতো, যা অনেক বেশি হাস্যকর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
ইয়াকব আরও জানান, তিনি যখন আট বা নয় বছর বয়সী ছিলেন, তখন তার বাবা তাকে লাথি মেরেছিলেন এবং ঘুষি মেরেছিলেন। বড় হওয়ার পরেও তিনি বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি পেতেন।
তবে, ইয়াকব স্বীকার করেছেন যে তিনি তার বাবা জার্টকে তার বড় ভাই হেনরিক এবং ফিলিপের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করতে দেখেননি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে জানা যায়, ১৮ বছর বয়সে ইয়াকব যখন তার বর্তমান স্ত্রী এলিজাবেথের সঙ্গে থাকতে বাড়ি ছাড়েন, তখনও তিনি তার বাবার থেকে ৩০০ মিটারের বেশি দূরে যাননি।
ইয়াকব বলেন, “আমি ততদূর যাওয়ার সাহস পাইনি, কারণ আমি মনে করি আমার বাবা-মায়ের সমর্থন আমার জন্য খুব দরকার ছিল। আমি ভয় পেতাম, বাবা হয়তো আমার জীবন নষ্ট করে দেবেন। কারণ, আর্থিক বিষয়, প্রশিক্ষণসহ আমার জীবনের অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল।”
২০২২ সালের শুরুতে ইয়াকব তার বাবা ও কোচের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ইয়াকব জানান, এর আগে জার্ট তার মুখে একটি ভেজা তোয়ালে ছুড়ে মেরেছিলেন। একই বছর ইউজিন-এ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫০০ মিটার দৌড়ে রৌপ্যপদক জেতার পর জার্ট তাকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
ইয়াকব জানান, “বাবা আমি ব্যর্থ হয়েছি, এটা দেখে খুশি হয়েছিলেন এবং তিনি সেই বার্তাটিতে তা প্রকাশ করেছিলেন।”
এই মামলার শুনানি আগামী ১৬ই মে পর্যন্ত চলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান