শিরোপা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ: ইন্টারের কাঁধে ইতালির ফুটবল!

**ইন্টার মিলান: ১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্নে ইতালির ফুটবল**

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলো।

কিন্তু ইতালির ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এটি যেন এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর সুযোগ। কারণ, শেষ ১৫ বছরে কোনো ইতালীয় ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি। এবার সেই আক্ষেপ ঘোচানোর হাতছানি ইন্টার মিলানের সামনে।

জার্মানীর মিউনিখে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলান মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি)। ইন্টার মিলানের জন্য এটি গত তিন বছরে দ্বিতীয় ফাইনাল।

তাদের সামনে এখন চতুর্থবারের মতো ইউরোপ সেরা হওয়ার সুযোগ।

ইতালীয় ফুটবলের সোনালী দিনগুলো ছিল নব্বইয়ের দশকে, যখন সিরি আ’ (ইতালির শীর্ষ ফুটবল লীগ) -তে খেলতেন বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা।

সেই সময়ে ইতালির ক্লাবগুলো ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে দাপট দেখিয়েছে। যদিও বর্তমানে সেই জৌলুস কিছুটা কমেছে, তারপরও আটালান্টা ও এএস রোমার ইউরোপা লীগ এবং কনফারেন্স লিগ জেতার পর ইন্টার মিলানের এই সাফল্য ইতালীয় ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।

ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, ইতালীয় ফুটবল বিগত বছরগুলোতে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করতে পারছিল না। তাই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় ইতালীয় ফুটবলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই জয় তাদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারে এবং প্রমাণ করতে পারে যে ইতালির ক্লাবগুলো এখনো সেরা হওয়ার সামর্থ্য রাখে।

এ বছর ইন্টার মিলান বেশ কয়েকবার শিরোপার খুব কাছে গিয়েও তা জিততে ব্যর্থ হয়েছে। গত সপ্তাহে তারা সিরি আ’ শিরোপা জেতার খুব কাছে ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক পয়েন্টের ব্যবধানে নাপোলির কাছে হেরে যায়।

এমনকি ইতালিয়ান সুপার কাপে এসি মিলান এবং ইতালিয়ান কাপের সেমিফাইনালেও তারা এসি মিলানের কাছে পরাজিত হয়।

তবে ইন্টার মিলানের জন্য ইতিবাচক দিক হলো, বর্তমান কোচ সিমোনে ইনজাঘির অধীনে দল ভালো খেলছে।

২০২১ সালে দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইনজাঘি এরই মধ্যে একটি সিরি আ’ শিরোপা, দুটি ইতালিয়ান কাপ এবং তিনটি ইতালিয়ান সুপার কাপ জিতেছেন। এছাড়া, পরপর দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ওঠাটাও তার কোচিং দক্ষতার প্রমাণ।

ইনজাঘির অধীনে ইন্টার মিলান দল যথেষ্ট শক্তিশালী। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ফ্রান্সেস্কো অ্যাসারবি, মাতেও ডার্মিয়ান এবং মিডফিল্ডার হেনরিখ মিখিতারিয়ান-এর মতো খেলোয়াড় রয়েছে দলে।

পরিসংখ্যান বলছে, এই মৌসুমে ইতালির দলগুলোর মধ্যে ইন্টার মিলানের গড় বয়স সবচেয়ে বেশি, ২৯.১ বছর।

ফাইনালে উঠার পথে ইন্টার মিলান বেশ কয়েকটি কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে। তারা নকআউট পর্বে ফেইনুর্দ, বায়ার্ন মিউনিখ এবং বার্সেলোনার মতো শক্তিশালী দলগুলোকে পরাজিত করে।

বিশেষ করে বার্সেলোনার বিপক্ষে সেমিফাইনালে অ্যাসারবি এবং ফ্রাত্তেসির গোলে পাওয়া জয় ক্লাবটির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম হলেন অধিনায়ক লাওতারো মার্টিনেজ। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৩ ম্যাচে ৯ গোল করে তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।

ফাইনালে মার্টিনেজ বলেছেন, তিনি এই মুহূর্তটি উপভোগ করতে চান এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে চান।

ইন্টার মিলান যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারে, তবে তা ইতালীয় ফুটবলের জন্য বিশাল এক অর্জন হবে।

একইসাথে, ১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলার স্বপ্ন পূরণ হবে ইন্টার মিলান সমর্থকদের। এখন শুধু ফাইনালের অপেক্ষা।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *