যুদ্ধকালীন মানসিক আঘাত: সিনেমায় থেরাপির মতো অভিজ্ঞতা, জানালেন ইরাক ফেরত সেনা

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সাবেক মার্কিন নৌ-সেনা, রের কমান্ডার রে মেন্ডোজা। তাঁর পরিচালিত ‘ওয়ারফেয়ার’ নামের এই ছবিতে ২০০৬ সালে রামাদি প্রদেশে সংঘটিত একটি বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে মেন্ডোজার বন্ধু গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এই সিনেমা তৈরির অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য থেরাপির মতো ছিল।

পেশাগত জীবনে মেন্ডোজা ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন নৌ-সেনা হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর তিনি হলিউডে সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন, যেখানে সিনেমা এবং অন্যান্য প্রোজেক্টের জন্য বন্দুক যুদ্ধের দৃশ্য ডিজাইন করতেন।

‘ওয়ারফেয়ার’ ছবিতে তিনি চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ছবিটি মূলত ইরাকের রামাদি প্রদেশের একটি বিপদসংকুল অনুসন্ধানী অভিযানের গল্প বলে, যেখানে মেন্ডোজা নিজে ২০০৬ সালে অংশ নিয়েছিলেন।

এই মিশনে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, স্নাইপার এবং চিকিৎসা সহকারী এলিয়ট মিলার গুরুতর আহত হন। আল-কায়েদা জঙ্গিদের সঙ্গে সৈন্যদের তীব্র লড়াই হয় এবং আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের।

সিনেমাটি নির্মাণ প্রসঙ্গে মেন্ডোজা জানান, যুদ্ধের সিনেমাগুলো সবসময় তাঁর ভালো লাগে না, কারণ সেগুলোতে তাঁদের সংস্কৃতি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় না।

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ারফেয়ার’ সম্ভবত যুদ্ধের সিনেমা নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো বদলে দেবে। তাঁর মতে, এই সিনেমা সৈন্যদের ভুলেনি বরং তাঁদের কথা বলছে।

সিনেমাটি তৈরির সময় ব্যক্তিগত ট্রমা বা মানসিক আঘাত নিয়ে কাজ করা কঠিন ছিল কিনা জানতে চাইলে মেন্ডোজা বলেন, তিনি সবসময় দায়িত্বশীল থাকতে চেয়েছেন।

তাঁর মূল ভয় ছিল, কেউ যদি সিনেমার গল্পে পরিবর্তন আনে অথবা হলিউডের চিরাচরিত ঢংয়ে সিনেমাটি তৈরি করতে চায়, তাহলে হয়তো অনেক কিছুই বদলে যাবে।

তবে চিত্রনাট্যকার অ্যালেক্স গারল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করার পর তাঁর এই দ্বিধা দূর হয়। তাঁরা দুজনেই সিনেমার গল্পটিকে বাস্তবতার কাছাকাছি রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং কারো স্মৃতিতে যা নেই, তা সিনেমায় যুক্ত করেননি।

সিনেমার শুটিংয়ের সময়কার স্মৃতিচারণ করে মেন্ডোজা বলেন, একটি দৃশ্যে আইইডি বিস্ফোরণের পর যখন অভিনেতা ডি’ফারাহ ওন-আ-তাই, যিনি মেন্ডোজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কসমো জার্ভিসকে (যিনি মিলারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন) টেনে নিচ্ছিলেন, তখন তাঁর আবেগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

তিনি জানান, সে সময় তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে শুটিং বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

যুদ্ধ এবং যুদ্ধের সিনেমা নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে মেন্ডোজা জানান, যুদ্ধের সময় তিনি ভয় পাননি, কারণ তিনি জানতেন, কী করতে যাচ্ছেন।

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে পাওয়া মানসিক আঘাত তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সিনেমায় শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, যুদ্ধের পরিবেশ ফুটিয়ে তোলার জন্য শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম।

সিনেমাটির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে মেন্ডোজা জানান, শুটিং শুরুর আগে তিনি অভিনেতা উইল পল্টারকে (যিনি এই অপারেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন) একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন।

তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল, অভিনেতাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি করা এবং তাঁদের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত করানো।

‘ওয়ারফেয়ার’ সিনেমাটি আগামী ১৮ই এপ্রিল যুক্তরাজ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *