ব্রিটিশ-ইরাকি বংশোদ্ভূত এক মায়ের আক্ষেপ: ছেলেকে নিজের সংস্কৃতির খাবার খাওয়াতে না পারার বেদনা।
ছোট্টবেলায় মায়ের হাতের রান্না করা খাবার, দাদা-দাদির মুখ থেকে শোনা গল্প—এসবের মধ্যে মিশে থাকে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের স্বাদ। প্রবাসে বেড়ে ওঠা অনেক মায়ের কাছেই, নিজের শিকড় টিকিয়ে রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ।
সম্প্রতি, এমনই এক মায়ের গল্প জানা গেছে, যিনি তাঁর ছেলেকে ইরাকি খাবার খাওয়াতে গিয়ে কঠিন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ছেলেকে নিজের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে খাবারের থেকে ভালো উপায় আর কী-ই বা হতে পারে! কিন্তু বাস্তবে, সন্তানের খাদ্যরুচি মায়ের প্রত্যাশার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ইরাক থেকে আসা তাঁর পরিবারের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো—যেমন, সামুন রুটি, আম্বা (আমের আচার), কিংবা তাবুলাহ—ছেলের কাছে ছিল অচেনা। কখনো বেশি স্টিকি, কখনো বা অদ্ভুত—এমন অজুহাতে সে সেসব খাবার ছুঁতেই চাইত না।
ছেলেকে ইরাকি খাবার খাওয়াতে না পারার এই ব্যর্থতা, যেন মায়ের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। তিনি জানান, “আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোক। তার খাদ্যতালিকায় ইরাকি খাবারের স্বাদ যোগ হোক।”
কিন্তু বাস্তবে, তার ছেলে ফিশ ফিঙ্গার আর মারমাইটের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিল।
ছেলের এই খাদ্য-বৈচিত্র্যের অভাব দেখে, মা হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি। তিনি নানা ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যান।
পরিচিতজনদের পরামর্শ নিতেন, রেসিপি পরিবর্তন করতেন, এমনকি খাবারকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। কিন্তু কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছিল না।
ছেলের খাদ্য-অনাগ্রহ সত্ত্বেও, মা তাঁর ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে, মায়ের হাতের তৈরি কিছু খাবার—যেমন, মজাদার ডেটস-এর পুর ভরা পেস্ট্রি—ছেলের মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়।
স্কুলের এক অনুষ্ঠানে, ছেলে যখন এই ডেটস-এর পেস্ট্রি নিয়ে যায়, তখন মায়ের মনে আনন্দের ঢেউ লাগে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, মায়ের আন্তরিক চেষ্টা একদিন সফল হবেই। খাবারের মাধ্যমে সংস্কৃতি আর ভালোবাসার যে বীজ তিনি বুনেছিলেন, তা ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হচ্ছে।
এই গল্প শুধু এক মায়ের নয়, বরং প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রতিটি সন্তানের, প্রতিটি পরিবারের। এটি একটি মানবিক গল্প, যা আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান