ইসরায়েলি হ্যাকারদের আক্রমণে ইরানের ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে বিশাল ক্ষতি!

ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি হাতিয়ে নেওয়ার দায় স্বীকার করেছে ‘প্রেডেটরি স্প্যারো’ নামের একটি হ্যাকিং গ্রুপ।

এই হ্যাকিং গ্রুপটি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে ধারণা করা হয়।

বুধবার (স্থানীয় সময়) এই সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে।

হ্যাকাররা জানায়, তারা ইরানের ‘নোবিটেক্স’ (Nobitex) ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরান এই এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করে আসছিল।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকাররা সম্ভবত চুরি করা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো এমন ডিজিটাল ওয়ালেটে (wallet) সরিয়ে ফেলেছে, যেগুলোর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

এর ফলে ওই ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো কার্যত ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

নোবিটেক্স তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম স্থগিত করার কথা জানিয়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক নজরদারি সংস্থা ‘এলিফটিক’ (Elliptic) এবং ‘টিআরএম ল্যাবস’ (TRM Labs) চুরি হওয়া ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার, ‘প্রেডেটরি স্প্যারো’ ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস’ (আইআরজিসি)-এর ব্যবহারের অভিযোগে ব্যাংক সেপাহ’র (Bank Sepah) তথ্য ধ্বংস করার দাবি করে।

ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি গ্যাস স্টেশনে ব্যাংক সেবার সম্ভাব্য বিঘ্ন ঘটার বিষয়ে সতর্ক করেছে।

তেহরানের একজন সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ও বুধবার তারা প্রায় ১০টি এটিএম বুথে যান, কিন্তু সেগুলোতে হয় টাকা ছিল না, নয়তো সেগুলো অচল ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাইবার জগতে চলমান ‘ছায়া যুদ্ধের’ এটি একটি বড় ধরনের দৃষ্টান্ত।

উভয় দেশ বা তাদের সমর্থকরা কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য নিয়মিতভাবে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি ও ডেটা ধ্বংসের মতো কাজ করে থাকে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হামিদ কাশেফির মতে, নোবিটেক্সে ‘প্রেডেটরি স্প্যারো’র এই হানা সাধারণ ইরানিদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

কারণ, নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্থিক সুযোগ সীমিত হয়ে আসায় অনেক ইরানি ক্রিপ্টোর ওপর নির্ভরশীল।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে উভয় দেশেই আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা চলছে।

ইসরায়েলিদের কাছে কর্তৃপক্ষের ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়েছে, যেখানে বোমা হামলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইরান সরকার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে জানিয়েছে যে, ইসরায়েল সম্ভবত তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।

তবে, হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ‘মেটা’ (Meta) এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে তাদের মেসেজগুলো এনক্রিপ্টেড (encrypted) থাকে।

বর্তমানে, ইরানের জনগণের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বাড়ছে।

অনেক সাধারণ মানুষ আর্থিক লেনদেনের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে, এই ধরনের সাইবার হামলা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

কারণ, এর ফলে তাদের সঞ্চয় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *