ইরানের মুদ্রা, রিয়ালের (Rial) দর পতন অব্যাহত, যা দেশটির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। শনিবার (Saturday) ডলারের বিপরীতে রিয়ালের বিনিময় হার ১ মিলিয়নেরও বেশি ছুঁয়েছে, যা তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনার ফলস্বরূপ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খবর সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ছুটির পর ইরানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই দরপতন দেখা যায়।
**অর্থনৈতিক সংকটে ইরানের সাধারণ মানুষ**
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইরানের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চরম প্রভাব পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের সঞ্চয়কে প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে।
জীবনধারণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেকে তাই এখন কঠিন মুদ্রা, সোনা, গাড়ি এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসের দিকে ঝুঁকছে, আবার কেউ দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য বিভিন্ন স্কিমে বিনিয়োগ করছে।
তেহরানের প্রধান মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, ফেরদৌসি স্ট্রিটে (Ferdowsi Street) ব্যবসায়ীরা বিনিময় হারের ইলেক্ট্রনিক সাইন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না, রিয়ালের দর আর কত নিচে নামবে।
একজন ব্যবসায়ী জানান, “আমরা বুঝতে পারছি না, হারের এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তাই সাইন বন্ধ করে দিয়েছি।
**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক চাপ**
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। বিশেষ করে, ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে দেশটির অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, ইরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা রিয়ালের দর পতনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক চাপ, তেলের বিক্রি কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কাই কঠিন মুদ্রার বিনিময় হার বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক এই অস্থিরতা ইরানের রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলেছে।
জনসাধারণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সরকারের নীতি নিয়েও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বাধ্যতামূলক হিজাব (hijab) পরার আইনের বিরুদ্ধে নারীদের প্রতিবাদ এখনো চলছে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়াও, ভর্তুকিযুক্ত গ্যাসের দাম বাড়ানোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, যা অতীতে দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইরানের এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং অর্থনৈতিক সংস্কার জরুরি। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হলে সরকারের নীতিনির্ধারণে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস