ইরানে ইসরায়েলের ‘সহযোগীকে’ ফাঁসি: প্রতিশোধের আগুনে তেহরান!

ইরানে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহসেন ল্যাঙ্গারনেশিন (৩৬)।

ইরানের অভিযোগ, ২০২২ সালে তেহরানে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর এক সিনিয়র কর্নেলকে হত্যায় তিনি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তা করেছিলেন।

বুধবার ভোরে গেজেল হেসার কারাগারে ল্যাঙ্গারনেশিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই খবর জানায়।

দেশটির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

তবে ল্যাঙ্গারনেশিনের পরিবার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। তাদের দাবি, ল্যাঙ্গারনেশিন নির্দোষ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

ল্যাঙ্গারনেশিনের মা তাঁর ছেলের জীবন বাঁচাতে সকলের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, “আমার সন্তানের জন্য দোয়া করুন… জানি না, সে আগামীকালকের সূর্য দেখবে কিনা।

আদালত কেন আমাদের দেওয়া কোনো প্রমাণ গ্রহণ করছে না, বুঝি না। আমরা তো তার নির্দোষ প্রমাণ করার মতো অনেক প্রমাণ জমা দিয়েছি, কিন্তু কিছুই তো গ্রাহ্য করা হচ্ছে না।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা IRNA-এর তথ্য অনুযায়ী, মোসাদের ‘শীর্ষ গুপ্তচর’ ছিলেন ল্যাঙ্গারনেশিন। তিনি ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডের কর্নেল হাসান সায়াদ খোদাইকে হত্যার ‘প্রযুক্তিগত সহায়তা’ জুগিয়েছিলেন।

২০২২ সালে তেহরানের নিজ বাড়ির বাইরে মোটরসাইকেলে করে আসা বন্দুকধারীরা কর্নেল খোদাইকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও, মোসাদের অন্যান্য কিছু অভিযানেও তিনি জড়িত ছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে মোসাদ ল্যাঙ্গারনেশিনকে নিয়োগ করে এবং তিনি জর্জিয়া ও নেপালে ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রায়ই দেখা যায়, আসল অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়ে ইরান সরকার নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

যাদের শনাক্ত করা হয়, ততক্ষণে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ইরান হিউম্যান রাইটস’-এর পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, “আজ ভোরে, মোসেন ল্যাঙ্গারনেশিনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তাকে ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল।

ইরানের কর্তৃপক্ষের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রতিদিন বাড়ছে, যা আরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩৫ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই ইরানে ৯০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মোসাদের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এছাড়া, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে আরও চারজনকে এক বছর আগে ফাঁসি দেওয়া হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘আবদুর রহমান বোরুমান্দ সেন্টার’ জানিয়েছে, ল্যাঙ্গারনেশিনের বিচারকাজ পরিচালনা করেন বিপ্লবী আদালতের বিচারক আবুল কাশেম সালাভাতি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃক তিনি নিষেধাজ্ঞার শিকার। সাধারণত, সংক্ষিপ্ত শুনানির মাধ্যমে বিপ্লবী আদালত রায় দেয় এবং এর কার্যক্রম গোপন থাকে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ছায়া যুদ্ধ চলছে। এর অংশ হিসেবে, দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যা ও বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

মোসাদের বিরুদ্ধে ইরানের বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি, ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে নতুন করে পারমাণবিক চুক্তি করতে চাইছেন।

তবে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো ইরানের ওপর সামরিক হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *