ইরানের ফোরদো: পাহাড়ের গভীরে পরমাণু বোমা তৈরির গোপন কেন্দ্র!

ইরানের ফোরদো পরমাণু কেন্দ্র : পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শঙ্কা বাড়ছে।

ইরানের বিতর্কিত ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। পাহাড়ের গভীরে নির্মিত, সুরক্ষিত এই কেন্দ্রটি সম্ভবত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই কেন্দ্রটি ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে অবস্থিত এবং এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফোরদো প্ল্যান্টটি মাটির নিচে গভীর করে তৈরি করা হয়েছে, যা একে যেকোনো ধরনের আকাশ পথে হওয়া হামলা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি অনুযায়ী, এই স্থাপনার প্রবেশপথগুলো একাধিক সুড়ঙ্গের মাধ্যমে সুরক্ষিত।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক হস্তগত হওয়া কিছু নথি থেকে জানা যায়, ফোরদোর মূল কাঠামো মাটির প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত।

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ করছে যে ইরান এই কেন্দ্রে গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে। যদিও তেহরান বরাবরই তাদের পারমাণবিক কার্যক্রমকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছে, তবে ফোরদোর অবস্থান এবং নির্মাণশৈলী নিয়ে সন্দেহ থেকেই গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফোরদোতে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ফলে দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে ইরান। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ফোরদোতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করা হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

ফোরদোর নির্মাণকাজ ২০০০ সালের প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল। ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই কেন্দ্রটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক হামলার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা। যদিও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি (JCPOA) অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের কার্যক্রম সীমিত করার কথা ছিল, তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসায় সেই নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা দেশটির কাছ থেকে তথ্য চুরির মাধ্যমে ফোরদোর নকশা এবং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছে। ইসরায়েলের মতে, ফোরদোর মূল লক্ষ্য হলো বছরে এক বা একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরি করা।

ফোরদোকে ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। কারণ এটি মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত এবং এর সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা বিশেষ বোমা ছাড়া এটি ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

তবে, ফোরদোর কার্যক্রম বন্ধ করতে অন্য কৌশল অবলম্বনেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে, ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কেন্দ্রের কার্যক্রমের ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের কড়া নজর রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *