ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ: ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে দিশেহারা জনগন!

ইরানে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে দেশটির ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন দেশটির সাধারণ মানুষ বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তেমনি তারা দেশের ভেতরের খবরও জানতে পারছে না।

এর ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইরানের জনগণের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

এর ফলে, ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের খবর জানতে পারা বা প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও ইসরায়েল সরকার তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফার্সি ভাষায় সতর্কবার্তা জানাচ্ছে, ইরানের সাধারণ মানুষ সেই তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তথ্য নিয়ন্ত্রণের এই পদক্ষেপ একটি ‘মানসিক যুদ্ধ’-এর অংশ। ইরানের কর্তৃপক্ষ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ দমনের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা ‘Access Now’-এর মতে, ইরানের সরকার তথ্য গোপন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক হামলা হয়েছে। ইসরায়েল সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়েছে এবং এর জবাবে ইরান ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছে।

এতে উভয় দেশেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ইরানে অন্তত ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।

অপরদিকে, ইসরায়েলেও বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি নাগরিকরা যুদ্ধের খবরাখবর নিয়মিতভাবে জানতে পারছে, যা তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছে। কিন্তু ইরানের সরকার তাদের নাগরিকদের কাছে সঠিক তথ্য সরবরাহ করছে না।

দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে এবং যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে না।

এই পরিস্থিতিতে ইরানের নাগরিকদের জন্য বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সামান্য কিছু মানুষ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও, তাদের পক্ষে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

অনেক পরিবার তাদের স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য এই সীমিত সুযোগের ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক যুগে যখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ঘটা যুদ্ধ বা সংঘাতের খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়, তখন ইরানের এই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট একটি উদ্বেগজনক বিষয়।

এর মাধ্যমে সরকার জনগণের কাছে যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র গোপন করতে চাইছে এবং নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে চাইছে।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *