ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় উভয়পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সোমবার ভোরে ইরানের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে, যার ফলশ্রুতিতে অন্তত পাঁচ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়েছে।
উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চলা এই সংঘাতে ধ্বংসযজ্ঞের কোনো বিরতি দেখা যাচ্ছে না।
ফিলিস্তিনের তেল আবিবে মার্কিন কনস্যুলেটের কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, এতে সামান্য ক্ষতি হলেও কোনো আমেরিকান কর্মী আহত হয়নি বলে জানা গেছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক্সে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইরান ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোতে চালানো হামলার প্রতিশোধ হিসেবে প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও হামলার হুমকি দিয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের এলিট কুদস ফোর্সের ১০টি কমান্ড সেন্টারে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা তেহরানে অবস্থিত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার ভোরের আগে তেল আবিবের আকাশে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে, সম্ভবত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করার চেষ্টা করছিলো।
এর ফলে শহরের আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়।
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় শহর পেতাহ টিকভাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, এতে একটি আবাসিক ভবনের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জানালা ভেঙে যায় এবং অ্যাপার্টমেন্টগুলোর একাংশ ধসে পড়ে।
জরুরি বিভাগ ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭০ বছর বয়সী দুই নারী ও দুই পুরুষসহ আরও একজন নিহত হয়েছেন।
পেতাহ টিকভার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের সামনে ইসরায়েলি পুলিশ মুখপাত্র ডিন এলসডুনে বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে দেখছি, আমাদের বেসামরিক নাগরিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পর তাদের অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হয়ে যায়।
ঘটনার শিকার ইয়োরাম সুকি নামের এক ব্যক্তি বলেন, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা অক্ষত আছি।
নিজের বাড়ি হারানো সত্ত্বেও তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও, এমডিএ জানিয়েছে, আহত ৮৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজন ৩০ বছর বয়সী নারীও রয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীরা এখনো কাজ করছেন।
এমডিএর একজন প্যারামেডিক ড. গাল রোজেন জানিয়েছেন, তিনি একটি ভবনে আগুন লাগার সময় ৪ দিন বয়সী একটি শিশুকে উদ্ধার করেছেন।
রবিবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি হামলা বন্ধ করে, তাহলে ইরানও তা করবে।
তবে ইসরায়েল সামরিক স্থাপনার বাইরে তেল শোধনাগার এবং সরকারি ভবনগুলোতেও হামলা চালালে বিপ্লবী গার্ড সোমবার কঠোর অবস্থান নেয় এবং জানায়, পরবর্তী হামলাগুলো আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী, তীব্র, সুনির্দিষ্ট ও ধ্বংসাত্মক হবে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানে ১,২৭৭ জন আহত হয়েছে, তবে এর মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবশ্য হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা বন্ধ করতে তাদের শীর্ষ সামরিক নেতা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর হামলা চালানো অপরিহার্য ছিল।
তবে ইরান বরাবরই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস