ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ‘নিরর্থক’, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল আক্রমণ বন্ধ না করে: সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন ইরানের সরকারি মুখপাত্র।
তেহরান, [তারিখ উল্লেখ করা হলো না] : ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি (nuclear program) নিয়ে আলোচনা কার্যত অর্থহীন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল তাদের উপর হামলা চালানো বন্ধ না করে। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের সরকারি মুখপাত্র ফাতেমেহ মোজাহেরানি।
তিনি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে মোজাহেরানি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে বসার কোনো অর্থ নেই। তাঁর মতে, অতীতেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে ২০১৮ সালে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) থেকে আমেরিকার বেরিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইরান আর খালি হাতে ফিরতে চায় না।
তেহরানের উত্তরে নিজের কার্যালয়ে বসে মোজাহেরানি সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা আবার আলোচনার মধ্যে ছিলাম, যখন এই হামলা শুরু হলো। আমাদের কর্মকর্তারা যেমনটা বলেছেন, হামলা চললে আলোচনা অর্থহীন। যখন হামলা বন্ধ হবে, তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবব।’
গত ১৩ই জুন ইসরায়েলের চালানো প্রথম আক্রমণে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কয়েক জন কমান্ডার নিহত হন এবং দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর থেকে, প্রতিদিনের হামলায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বৃহত্তম গ্যাস ক্ষেত্র এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
তেহরানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারী নিসরিণ জানান, ইসরায়েলের হামলায় আহত হওয়ার পর তিনি কোনোমতে হাসপাতালে পৌঁছতে পেরেছিলেন। তাঁর পেটে, কিডনি এবং লিভারে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় তাদের ২৪ জন নিহত হয়েছে এবং ১,২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিব ও অন্যান্য শহরে আঘাত হেনেছে, এমনকি একটি হাসপাতালে আঘাত হানে।
সংঘাতের মূল কারণ হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে মোজাহেরানি সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবারও জানান, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অস্ত্রের জন্য নয়, বরং তারা এটা শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘পরমাণু শক্তি আমাদের কাছে যুদ্ধের বিষয় নয়, বরং জীবন ধারণের অংশ। তাই আমরা মনে করি, সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার।’
তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাঁদের বোমা হামলাকে তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার রিশন লেজিওনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থান পরিদর্শন করে বলেন, ‘আমরা একটি বড় বিপদ—প্রধানত ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য, সেই সাথে পুরো অঞ্চল, ইউরোপ এবং বিশ্বব্যবস্থার—প্রতিরোধের জন্য কাজ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়িত হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনেইকে হত্যার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করেছেন।
গত ১৭ই জুন ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, তবে সেখানে নিরাপদ আছেন।
আমরা তাঁকে সরানোর (হত্যা) পরিকল্পনা করছি না, অন্তত এখন পর্যন্ত না।’
ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের শীর্ষ নেতাকে সরাসরি আঘাত করার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে মোজাহেরানি বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে যে ইসরায়েল ইরানি জনগণের ঐক্য বোঝে না।
ইসরায়েলের এমন কিছু করা উচিত নয়, যার ফল তাদের দিতে হবে। ইরানের জনগণ তাঁদের নেতার পাশে আছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আজ ইরানের প্রতিটি নাগরিকের কাছে ইরান একটি ঐক্যবদ্ধ ধারণা, যা আমরা অবশ্যই রক্ষা করব।’
তথ্য সূত্র: সিএনএন