ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে যেমন শোনা যাচ্ছে, এই চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি’র বক্তব্যে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে।
তেহরানের সাধারণ মানুষের মনেও দ্বিধা রয়েছে— নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে ভালো, তবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভরসা রাখতে তারা নারাজ।
আলোচনা যত বাড়ছে, ততই জটিলতা বাড়ছে। ইরানের অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব গভীর। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দেশটি রাশিয়া ও চীনের মতো মিত্রদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
খবর অনুযায়ী, পশ্চিমা ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র এখন সেখানে পাওয়া কঠিন, তবে সেগুলোর নকল পাওয়া যায়। গাড়ির বাজারও মূলত ইরান অথবা চীন-নির্ভর।
বিমান শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ যন্ত্রাংশ আমদানি এবং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে, রাশিয়া ও চীন এই সুযোগের পূর্ণ সুবিধা নিতে চাইছে। রাশিয়া সম্ভবত ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন তৈরির জন্য কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে, যার বিনিময়ে তারা ইরানের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম পাচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ড্রোন দেওয়ার কথা ইরান অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীনের কাছ থেকে ইরান তাদের সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করছে।
ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এক সময় বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণেই আমেরিকান কোম্পানিগুলো ইরানের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। তেহরানের একজন বাসিন্দা মরিয়ম মনে করেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা ‘গেম চেঞ্জার’।
তার মতে, এখন তারা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারছে না।
আলোচনার মূল বিষয় হলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। ইরান কোনো অবস্থাতেই এই অধিকার ছাড়তে রাজি নয়।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনি’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই এখানে প্রধান। তবে, আলোচনার পঞ্চম দফা বৈঠকের জন্য তেহরান প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়েছে, যা আগামী শুক্রবার ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলও এই আলোচনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে বলেছেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ করতে হবে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও থামাতে হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো চুক্তিতে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
আরেকজন তেহরানবাসী এসকান্দার মনে করেন, ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করে দেয়, তবে তা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী। তিনি লিবিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘লিবিয়া তাদের সব কিছু দিয়েও পশ্চিমা বিশ্বের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেনি।’
অন্যদিকে, ইসরায়েল আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করতে পারে যা ইরানের দুর্বলতার কারণ হবে।
তারা মনে করে, এর ফলস্বরূপ ইরানেও সরকার পরিবর্তন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করে, তবে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন