ইরানের বন্দর আব্বাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ২৮ জনের বেশি, কারণ অজানা
ইরানের বন্দর আব্বাসে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আট শতাধিক মানুষ। শনিবারের এই ঘটনার কারণ এখনো পর্যন্ত ইরানের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বন্দরের কন্টেইনারগুলোতে আগুন লাগে এবং এরপরই একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার পরপরই মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফার্স নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু কর্মীর সামনে কন্টেইনারগুলোর কাছে সামান্য আগুন জ্বলছে এবং তার কিছু পরেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকশ টন রাসায়নিক পদার্থ বন্দরে আসে। এরপর মার্চ মাসেও একই ধরনের আরেকটি চালান আসে বলে জানা গেছে। ইরানের কাস্টমস প্রশাসন এই বিস্ফোরণের জন্য বন্দরে মজুদ করা “বিপজ্জনক পণ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য”-কে দায়ী করেছে।
ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি জানিয়েছে, বন্দরের এই বিস্ফোরণের সঙ্গে ওই এলাকার তেল শোধনাগার, জ্বালানি ট্যাঙ্ক বা পাইপলাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি কর্মকর্তারা বন্দরে কোনো সামরিক সরঞ্জাম মজুত ছিল এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিটির মুখপাত্র ইব্রাহিম রেজাঈ রবিবার এক বিবৃতিতে জানান, প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এই বিস্ফোরণের সঙ্গে ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিস্ফোরণের পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এবং ত্রাণ কার্যক্রম তদারকির জন্য বন্দর আব্বাসে যান। তিনি আহতদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যখন উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময়ে এই বিস্ফোরণ ঘটল। তবে ইরানের কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা এখনো পর্যন্ত এটিকে কোনো হামলার ইঙ্গিত দেননি।
ঘটনার স্থান থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দরে কন্টেইনারের স্তূপ থেকে কমলা-বাদামি ধোঁয়া উড়ছে। এই ধরনের ধোঁয়া সম্ভবত সোডিয়াম বা অ্যামোনিয়ার মতো কোনো রাসায়নিকের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
রবিবারও বন্দরে আগুন জ্বলছিল, তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ‘সোডিয়াম পারক্লোরেট’ নামক একটি রাসায়নিক বিস্ফোরিত হয়েছে, যা ক্ষেপণাস্ত্রের কঠিন জ্বালানির প্রধান উপাদান।
তবে বন্দরটিতে ঠিক কী ধরনের রাসায়নিক মজুত ছিল এবং কেন এত দিন ধরে তা সেখানে রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে সিএনএন জানিয়েছিল, চীনের তৈরি ১০০০ টনের বেশি রাসায়নিক নিয়ে আসা দুটি জাহাজের মধ্যে প্রথমটি বন্দর আব্বাসের কাছে নোঙ্গর করে। এই রাসায়নিক ইরানের সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জ্বালানির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ‘গোলবন’ নামের জাহাজটি জানুয়ারিতে চীনের তাইচাং বন্দর থেকে ১০০০ টনের বেশি সোডিয়াম পারক্লোরেট বোঝাই করে যাত্রা শুরু করে। এই রাসায়নিক ইরানের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রধান উপাদান।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, এই পরিমাণ সোডিয়াম পারক্লোরেট দিয়ে ইরানের ‘খাইবার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ২৬০টি এবং ‘হাজ কাসেম’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ২০০টি কঠিন রকেট তৈরি করা সম্ভব।
তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিএনএনকে জানায়, ‘চীন সবসময় আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও অভ্যন্তরীণ আইন অনুযায়ী দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য পণ্যের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে। সোডিয়াম পারক্লোরেট চীনের নিয়ন্ত্রিত কোনো পণ্য নয় এবং এর রপ্তানি স্বাভাবিক বাণিজ্য হিসেবেই ধরা হয়।’
তথ্য সূত্র: সিএনএন