ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ফুঁসছে ইরান: কী হবে এবার?

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তপ্ত ইরান, বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা। মধ্যপ্রাচ্যে আবারও যুদ্ধের দামামা।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে তেহরানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক—সবার মাঝেই এখন চরম উত্তেজনা।

এই ঘটনার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের উপরও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে, রবিবার ভোরে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত হানে মার্কিন বাহিনী।

এর মধ্যে ছিল ফোরদো ও নাতানজের মত সুরক্ষিত স্থাপনাগুলো। এই হামলার পরই তেহরানের রাস্তায় নেমে আসে বহু মানুষ।

তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং প্রতিশোধের দাবি জানায়। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানিয়েছে, তারা এর উপযুক্ত জবাব দেবে।

অনেকে বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। তেহরানের এনগেলাব স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করে।

তারা ইরানের পতাকা হাতে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস কামনা করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যারা ইরানের বর্তমান সরকারের নীতির কড়া সমালোচক।

কিন্তু এই মুহূর্তে তারা সবাই দেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে একজোট হয়েছেন। ইরানের ধর্মীয় শহর কোমে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার বাসিন্দারা হতবাক হয়ে যান।

কারণ, হামলার কোনো আগাম সতর্কতা তারা পাননি। কোমের মত গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিমান হামলার সতর্কীকরণ ব্যবস্থা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইরান খুব দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে।

তবে ইরানের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের অনেকেই প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।

অনেকে আবার হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি তুলেছেন। কারণ, এই প্রণালী দিয়ে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ তেলের বাণিজ্য হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে ইরানে জাতীয়তাবাদী চেতনা আরও শক্তিশালী হতে পারে। একই সঙ্গে, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পারমাণবিক নীতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়বে।

এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে তেলের বাজারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, কারণ তেলের দাম বাড়লে আমাদের আমদানি ব্যয় বাড়বে।

এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। সব মিলিয়ে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে, তা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হবে। তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *