ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি পারমাণবিক আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আলোচনার পথ একেবারে বন্ধ হয়নি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সরাসরি না হলেও, পরোক্ষভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি আছে তেহরান।
অন্যদিকে, তেহরান যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে না আসে, তাহলে বোমা হামলা এবং অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
রবিবার তেহরানে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা ওমানের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো চিঠির জবাব দিয়েছি এবং সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি।
তবে, আমরা পরোক্ষ আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি।”
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরান নীতিগতভাবে আলোচনার বিরোধী নয়, তবে ওয়াশিংটনকে প্রথমে তাদের অতীতের ‘ভুল’ সংশোধন করতে হবে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ-তে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার এই পরিস্থিতিতে পেজেশকিয়ানের এই মন্তব্য এসেছে।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যদি তারা কোনো চুক্তি না করে, তাহলে বোমা হামলা হবে।
তবে, যদি তারা চুক্তি করতে রাজি না হয়, তাহলে আমি চার বছর আগের মতো তাদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করব।”
এর আগে, মার্চ মাসে ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
সেই চিঠিতে তেহরানকে নতুন করে আলোচনার জন্য রাজি হতে অথবা সামরিক সংঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হুঁশিয়ার করা হয়।
তবে খামেনেই এই আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেন, ইরান কেবল মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই আলোচনা করবে।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কার্যক্রমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, যার বিনিময়ে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ছিল।
২০১৮ সালে ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান একাধিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট উপকরণ জমা করেছে, যদিও তারা এখনো কোনো বোমা তৈরি করেনি।
ইরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা হলেই কেবল এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেইয়ের উপদেষ্টা কামাল খাররাজি বলেছেন, তেহরান আলোচনার সব দরজা বন্ধ করে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, “অন্য পক্ষকে মূল্যায়নের জন্য, তাদের শর্তগুলো জানানোর জন্য এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইরান।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা