ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি: নয়া সমীকরণ?

ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ান কোম্পানিগুলো ইরানের সাতটি তেলক্ষেত্র উন্নয়নে কাজ করবে।

ইরানের তেলমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। খবর অনুযায়ী, উভয় দেশই পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করতে এবং পারমাণবিক আলোচনাকে আরও গতি দিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

তেহরান ও মস্কোর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে জ্বালানি, ব্যাংকিং ও কৃষি ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। গত জানুয়ারিতে দেশ দুটি একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে।

এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

শুক্রবারকার এই চুক্তির পাশাপাশি, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরুর প্রস্তুতি চলছে। ওমানে শনিবার এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আলোচনার আগে ইরান মস্কো ও বেইজিংয়ের সঙ্গে মিত্রতা জোরদার করেছে।

বৃহস্পতিবার, ইরানের তেলমন্ত্রী রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নোভাক ওপেকভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশেষ দূত হিসেবে পরিচিত।

বৈঠকের সময়, ওপেক প্লাস-এর বেশ কয়েকজন সদস্য জুনে তেলের উৎপাদন আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাব উৎপাদন কোটা মেনে চলা নিয়ে বিদ্যমান বিতর্কের ইঙ্গিত দেয়।

এর আগে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওপেককে তেলের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি পুনর্বহাল করতে চেয়েছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

শুক্রবার উভয় দেশ ঘোষণা করেছে যে, রাশিয়া এ বছর ইরানের কাছে ১.৮ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে পারে। তবে, গ্যাসের দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

তেলমন্ত্রী পাকনেজাদ জানিয়েছেন, চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন করার জন্য কাজ চলছে এবং রাশিয়ার গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম এই চুক্তি বাস্তবায়ন করবে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইরান ও রাশিয়া গ্যাস হাব তৈরির বিষয়ে আলোচনা করছে। এতে কাতার ও তুর্কমেনিস্তানের অংশগ্রহণেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

জ্বালানি উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সহযোগিতা রয়েছে। এর আগে, রাশিয়া ইরানের বুশেহরে দেশটির প্রথম পারমাণবিক চুল্লি তৈরিতে সহায়তা করেছে।

জানুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ক্রেমলিনে এক বৈঠকে বলেছিলেন, রাশিয়া ভবিষ্যতে বছরে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করতে পারে।

যদিও শুরুতে ২ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নর্ড স্ট্রিম ১ গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হতো, সেই পরিমাণ গ্যাসের সমান হলো ৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২২ সালে পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এরপর থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

গত জুন মাসে রাশিয়ার গ্যাস জায়ান্ট গ্যাজপ্রম, ইরানের ন্যাশনাল গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে রাশিয়ান পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহ করার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (memorandum) স্বাক্ষর করে।

তবে, পাইপলাইনের সম্ভাব্য রুট এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *