ইরান সংকট: যুদ্ধের দিকে? ট্রাম্পের সময়সীমা, ফোরদোও কি ধ্বংস হবে?

ইরান-ইসরাইল সংকট: কূটনৈতিক সমাধানের পথ কঠিন হচ্ছে, কিন্তু একেবারে বন্ধ নয়।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। কূটনৈতিক সমাধান নাকি সামরিক পদক্ষেপ? এমন নানা প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক মহলে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকটের চারটি সম্ভাব্য দিক রয়েছে। প্রথমত, কূটনৈতিক আলোচনা সফল হতে পারে। তবে জেনেভায় ইরান ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে হওয়া আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো (Fordow) পরমাণু স্থাপনায় সামরিক হামলা চালাতে পারে। তৃতীয়ত, ইসরাইল একাই ফোরদো ধ্বংস করার চেষ্টা করতে পারে। চতুর্থত, সংকট চলতেই থাকবে।

বর্তমানে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে। জেনেভার বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। ইরানের পক্ষ থেকে তাদের আগের অবস্থানেই অনড় থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো সরাসরি আলোচনার চেষ্টা চলছে, বিশেষ করে কাতার ও ওমানের মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্র ফোরদো পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে তারা এরই মধ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। সম্ভবত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে গেলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন সামরিক প্রস্তুতি হয়তো ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে।

অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই ফোরদো ধ্বংস করার উপায় তাদের জানা আছে।

অতীতে সিরিয়ায় ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে ইসরাইলের সফল অভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ইরানের পরমাণু স্থাপনার বিরুদ্ধে এমন অভিযান চালানো কঠিন হতে পারে।

যদি কোনো সমাধান না আসে, তাহলে সংকট চলতেই থাকবে। সেক্ষেত্রে ইসরাইল ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে। ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই মুহূর্তে হয় সামরিক পদক্ষেপ, নয়তো সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কূটনৈতিক আলোচনাকে আরও জোরালো করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কাছে তাদের প্রস্তাবগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে। দ্বিতীয়ত, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের চেষ্টা করা যেতে পারে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হতে পারে। ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি করা যেতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা কূটনৈতিক সমাধানের জন্য কিছুটা সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এখন পর্যন্ত আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *